একচেটিয়া ব্যবসা ধরে রাখতে গিয়েই সোহাগ খুন—জবানবন্দিতে রবিন

রাজধানীর পুরান ঢাকায় যুবদল কর্মী ও ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার তারেক রহমান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার (১২ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দিতে রবিন দাবি করেন, সোহাগকে চাঁদাবাজির কারণে নয়, বরং দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং এই ঘটনার সঙ্গে তার সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
রবিন বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সোহাগ ভাঙারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এর ফলে মহিনসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। তারা আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তারা যুবদলে যোগ দিয়ে আগের মতো ব্যবসা ও সিন্ডিকেট চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সংঘাতই সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানান রবিন।
এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এর মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শনিবার পৃথকভাবে গ্রেফতার টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন জানান, ভাঙারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৯ জুলাই বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হামলাকারীরা ইট, রড, হেলমেট ও সিমেন্টের কংক্রিট দিয়ে মাথা ও শরীরে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘটনাস্থলে লাশের ওপর লাথি মারা ও উল্লাস করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, "ভিডিওতে পাশবিকতার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি। এ যেন আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে ফিরে যাওয়া। সর্বোচ্চ রিমান্ডই এখানে ন্যায্য।"
আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে টিটন গাজী দাবি করেন, “আমি কেবল ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কাউকে মারিনি, হুকুমও দিইনি।” তিনি আরও জানান, ভিডিওতে তাকে দেখা গেলেও তিনি কোনো সহিংসতায় অংশ নেননি।
অন্যদিকে জবানবন্দি শেষে রবিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত না, অথচ সারা দেশে আমাকে দোষী মনে করা হচ্ছে। আমার একে-৪৭ উদ্ধার হলেও এর ব্যবহার হয়নি। বিদেশ যাওয়ার সব প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে।”
উল্লেখ্য, ৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন এবং পুলিশ পৃথকভাবে অস্ত্র মামলা করে।