নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেও মন্ত্রী মুক্ত, প্রশ্ন তুলতেই গ্রেপ্তার অধ্যাপক মাহমুদাবাদ

বিজেপির ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গ্রেপ্তার অধ্যাপক মাহমুদাবাদ, মুক্ত নারীবিদ্বেষী মন্ত্রী
অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুধুমাত্র বিজেপির ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও দলটির ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণে। অন্যদিকে, বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ এখনো দণ্ডমুক্ত, যদিও তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে “সন্ত্রাসবাদীদের বোন” বলে অপমান করেছিলেন।
অধ্যাপক মাহমুদাবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংকে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আনায় অনেক দক্ষিণপন্থী তাঁদের প্রশংসা করছেন, যা প্রশংসনীয়। তবে যদি তারা একইভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, গণপিটুনি, এবং বুলডোজার রাজনীতির বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলতেন, তাহলে তা হতো প্রকৃত দেশপ্রেম। না হলে এটি ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়।
এই মন্তব্যের পর হরিয়ানা বিজেপির যুব মোর্চার নেতা যোগেশ জাথেরি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। দিল্লি পুলিশ রবিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে উসকানি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট ও বিদ্রোহমূলক বক্তব্যের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের আগে অধ্যাপক মাহমুদাবাদ বলেন, তিনি নারীদের প্রশংসাই করেছেন এবং কোনোভাবেই বিদ্বেষ ছড়াননি। তিনি শুধুমাত্র দাবি করেছেন যে, সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির এই মনোভাব দেশজুড়ে মুসলিমদের প্রতিও প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
এই গ্রেপ্তার নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা। সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব বলেন, “কুমন্তব্যকারীরা মুক্ত, আর সত্যবাদীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন।” কংগ্রেসের পবন খেরা লেখেন, “এই সরকার প্রশ্নকে ভয় পায়, তাই লেখক-অধ্যাপকরা শত্রু।”
অধ্যাপক মাহমুদাবাদের পারিবারিক পরিচয়ও উল্লেখ করেন তিনি—তাঁর নানা ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব পদ্মভূষণ জগৎ মেহতা।
এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি এই গ্রেপ্তারকে “নিন্দনীয়” বলে অভিহিত করেছেন। দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরাও অধ্যাপকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার থেকে রামচন্দ্র গুহ, জয়তী ঘোষসহ অনেকেই এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি এমন এক অস্বাভাবিক ভারত, যেখানে সেনাবাহিনীর পাশে থেকেও যুদ্ধবাজ মনোভাবের সমালোচকরা হয়রান হন।”
অধ্যাপকের বিশ্ববিদ্যালয় অশোক বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র বলেছে, “আমরা মামলার বিস্তারিত খতিয়ে দেখছি এবং তদন্তে সহযোগিতা করবো।”