রায়হানের আমবাগানে সাফল্যের গল্প

নিজের ফলবাগানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সফল কৃষি উদ্যোক্তা রায়হান আলম।
নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান আর গমের জমিতে যখন আমচাষ ছিল দুর্লভ, তখনই কৃষিতে সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলেন রায়হান আলম। মাত্র এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০৫ সালে আট বিঘা জমিতে আমের চারা রোপণ করেছিলেন তিনি। সেই ছোট উদ্যোগ এখন রূপ নিয়েছে প্রায় ২০০ বিঘা জমিজুড়ে ১৬টি ফলদ বাগানে, যা থেকে বছরে আয় করছেন ৫০ লাখ টাকার বেশি।
পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকায় কথা হয় কৃষি উদ্যোক্তা রায়হান আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হন তিনি। তখন তিনি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র। সংসারের আয় বাড়াতে খোঁজখবর নিয়ে আমচাষের সম্ভাবনা দেখতে পান। পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে ধান আর গরু বিক্রি করে এক লাখ টাকা দিয়ে আম্রপালি, ল্যাংড়া, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা ও ফজলি জাতের ২ হাজার চারা কিনে শুরু করেন বাগান।
দুই বছর পর প্রথমবার তিন লাখ টাকার আম বিক্রি করেন রায়হান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাগানের আয় দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। ২০১২ সালে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে আরও জমি ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে ১৬টি ফলদ বাগান গড়ে তোলেন।
বর্তমানে সাপাহার, পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলায় তাঁর বাগানগুলোতে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ২০-২৫ জাতের আম চাষ করেন তিনি। এর মধ্যে আছে ব্যানানা ম্যাঙ্গো, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই, ব্রুনাই কিং ও কিউজাই জাতের আমও। পাশাপাশি ড্রাগন ও পেয়ারা চাষ করেও ভালো আয় হচ্ছে তাঁর।
রায়হান জানান, গত বছর তাঁর বাগান থেকে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে আয় হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ বছর আয় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
নতুন চাষিদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, একাধিক জাতের আমগাছ রোপণ করা উচিত। কারণ, এসব আম ভিন্ন সময়ে পাকে, ফলে বাজারে সরবরাহ ধরে রাখা যায় দীর্ঘ সময়। এতে বাজারদর পড়ে গেলেও লোকসান কম হয়।
স্থানীয় চাষি সাইদুর রহমান বলেন, ‘রায়হান ভাই আমাদের এলাকায় প্রথম নাবি আম বারি-৪ ও গৌড়মতির চাষ শুরু করেন। মৌসুমের শেষে এসব আমের দাম কয়েক গুণ বেশি থাকে। এখন আমিও একাধিক জাতের আম চাষ করি, লাভও বেশি হয়।’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষ থেকে আমচাষের দিকে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা। অনেক শিক্ষিত তরুণও আসছেন এই খাতে। তাঁদের মধ্যে রায়হান আলম অন্যতম, যিনি নতুন জাতের আম চাষ করে ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছেন।