ইসরায়েলি নিপীড়নে পশ্চিম তীর ছাড়ছে বেদুইন পরিবারগুলো

অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় এলাকা ছাড়তে বাধ্য বেদুইন পরিবারগুলো
পশ্চিম তীরের এক বেদুইন গ্রামে ধ্বংসাবশেষের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এক ফিলিস্তিনি। হামলা ও হয়রানিতে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয়রা।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের ছত্রছায়ায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলা, নির্যাতন ও হুমকিতে অতিষ্ঠ হয়ে অন্তত ৫০টি বেদুইন পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। শুক্রবার ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই তথ্য জানিয়েছে।
ওয়াফার খবরে বলা হয়, গতকাল সকালে জেরিকোর উত্তরে আরব মলেইহাত বেদুইন জনগোষ্ঠীর ৩০টি পরিবারকে জোরপূর্বক সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আগের দিন একই এলাকা থেকে ২০টি পরিবার চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এর আগে ওই এলাকায় ৮৫টি পরিবারের প্রায় ৫০০ জনের বসবাস ছিল।
হুমকি, হামলা ও অস্ত্রের মুখে পালিয়ে যাওয়া
স্থানীয় অধিকার সংগঠন ‘আল-বাইদার’-এর পরিচালক হাসান মলেইহাত জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোনো সরকারি সহায়তা ছাড়াই পরিবারগুলো ওই এলাকায় টিকে থাকার চেষ্টা করছিল। তবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় তারা বাধ্য হয়ে এলাকা ছাড়ছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতেও দেখা গেছে, রাতে মালপত্রবোঝাই ট্রাক নিয়ে পরিবারগুলো স্থান ত্যাগ করছে।
এক বেদুইন নারী আলিয়া মলেইহাত ওয়াফাকে বলেন, “সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীরা বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিলে আমরা বাধ্য হই জেরিকোর আশপাশে আশ্রয় নিতে।” সাত সন্তানের বাবা মাহমুদ মলেইহাত বলেন, “আমরা আর সহ্য করতে পারছিলাম না। হামলার সময় সেনাবাহিনী বসতি স্থাপনকারীদেরই রক্ষা করে।”
ধ্বংস, উচ্ছেদ আর অনিশ্চয়তা
মানবাধিকার সংগঠন বেতসেলেম জানিয়েছে, জেরিকোর কাছে মুআরাজাত এলাকায় বেদুইনদের বসবাস ছিল। গত কয়েক বছরে সেখানে বসতি স্থাপনকারীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে—স্কুলে আক্রমণ, যানবাহনে গুলিবর্ষণ ও পাথর নিক্ষেপ করেছে।
“আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদ রাখতে চাই। তাই এই সিদ্ধান্ত,” বলেন মাহমুদ, যিনি ১০ বছর বয়স থেকে ওই এলাকায় বসবাস করছেন।
আলিয়া মলেইহাত জানান, সম্প্রদায়টি ৪০ বছর ধরে পশ্চিম তীরে বসবাস করছিল। এখন তারা জর্ডান উপত্যকার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের স্বপ্ন গড়া গ্রাম নিজ হাতে ভেঙে চলে যেতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য এক নতুন ‘নাকবা’।"
‘নাকবা’ অর্থ ‘বিপর্যয়’। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় লাখো ফিলিস্তিনিকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, সেই ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করছেন তিনি।
বসতি স্থাপনই আসল উদ্দেশ্য?
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডেওন সার বলেছেন, “নাগরিকদের সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয়, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়।”
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণই এসব হামলার মূল উদ্দেশ্য। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকে অধিকাংশ দেশ জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী বলেই বিবেচনা করে।