নির্বাচন সামনে রেখে বহু ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পাচ্ছি: শফিকুর রহমান

রংপুরে জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভায় বক্তব্য রাখছেন আমির শফিকুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে বহু ষড়যন্ত্রের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। মাঠে-ময়দানে নানা ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জেলা স্কুলমাঠে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতের রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা এই জনসভার আয়োজন করে। এটি গত ১৭ বছর পর রংপুরে দলটির প্রথম বিভাগীয় জনসভা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির বলেন, “শেখ হাসিনার সময় সমস্ত রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সবখানে তাঁর লোক ছিল, ক্যাডার ও মাস্তান দিয়ে রাষ্ট্র চালানো হয়েছিল। কিন্তু জনগণের জাগরণ যখন বিস্ফোরণে রূপ নেয়, তখন কাউকে তাঁকে রক্ষা করতে দেখা যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যে জনগণ অনেক ত্যাগ স্বীকার করে পরিবর্তন এনেছে, তারা আর কোনো ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেবে না।”
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শুধু পাটগ্রাম নয়, আজ পুরো দেশেই একই পরিস্থিতি। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে মৌলিক কিছু সংস্কার প্রয়োজন, এবং আমরা সেই সংস্কার আদায় করে নেব। ইনশা আল্লাহ, সুষ্ঠু নির্বাচনও নিশ্চিত করব।”
দেশপ্রেমিক ও ইসলামপন্থি দলগুলো একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “যারা আবারও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ছায়ায় নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। কোনো প্রশাসনিক ক্যু হতে দেওয়া হবে না, মাস্তানতন্ত্র ও কালোটাকার খেলা আর বরদাস্ত করা হবে না,” বলেন শফিকুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, “আমরা অঙ্গীকার করছি—এই ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চলবে যতদিন না দেশে ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলা যায়।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, “যারা অতীতে অপরাধ করেছেন, তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন যারা দায়িত্বে আছেন, তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে।”
জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ্য কারামুক্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমার মুক্তির পেছনে প্রথম শহীদ হচ্ছেন আবু সাঈদ—রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। তাঁর রক্তদানের মাধ্যমে যে গণজাগরণ শুরু হয়েছিল, সেটির পরিসমাপ্তি ঘটে ৫ আগস্ট ২০২৪-এ। যদি সেই দিন না আসত, তাহলে আপনারা আজ হয়তো আমার জানাজায় অংশ নিতেন।”
তিনি আবু সাঈদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এ টি এম আজম খান। আরও বক্তব্য দেন দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আব্দুল হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল এবং কেন্দ্রীয় শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া এই জনসভায় সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মাঠে আসতে থাকেন। জুমার নামাজের পর মাঠ উপচে আশপাশের এলাকাতেও জনসমাগম ছড়িয়ে পড়ে।