যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কছাড়ের আশায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কছাড় পেতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে: আলোচনা ইতিবাচক গতিতে চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপ থেকে রক্ষা পেতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের মত বিভিন্ন দেশের আলোচনা চলছে। কিছু দেশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, তবে কোথাও নতুন জটিলতাও দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এই বিষয়ে আলোচনার জন্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার তারা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরবর্তী বৈঠক সম্ভবত ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশি বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানও এই বৈঠকে যোগ দিতে পারেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন প্রথম আলোর কাছে বলেন, “আমরা ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় আছি এবং আশা করছি ভালো শুল্কছাড় পেতে সক্ষম হব। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় সর্বোচ্চ ছাড় গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করে। কিন্তু গত ৩ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন অপ্রত্যাশিতভাবে ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যার ফলে মোট শুল্ক ৫২ শতাংশে পৌঁছে যায়। যদিও ৯ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তবে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়। এই স্থগিত মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হবে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার। তাই দেশের গুণগত পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশ সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে জুনে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, যা বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেন, যেখানে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এর আগে এই পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ছিল। তবে নতুন এই চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ইতিবাচক প্রগতি দেখাচ্ছে। ইউরোপ ১০ শতাংশ অভিন্ন শুল্ক আরোপ চায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও বিভিন্ন খাতে শুল্ক ছাড় চায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা বর্তমানে স্থবির রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত কৃষি পণ্য, ইস্পাত ও গাড়ির যন্ত্রাংশে শুল্ক ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ভারত বলেছে, তারা আলোচনায় প্রস্তুত, তবে মূল বিরোধ রয়েছে কৃষিপণ্য ও ইস্পাত খাতে।
এর বাইরে, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে এবং খসড়া চুক্তি প্রস্তুত রয়েছে। সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, তুলা ও গম আমদানির বিষয়টি।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, আলোচনাগুলো ইতিবাচকভাবে এগুচ্ছে। যদিও শিগগির চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম, শুল্ক আরোপ স্থগিত থাকার মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।