মুরাদনগরে ধর্ষণ: ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মূলহোতা শাহ পরান গ্রেফতার

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া মামলার মূলহোতা শাহ পরানকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে জেলার বুড়িচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শাহ পরান ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীর ছোট ভাই। র্যাব জানিয়েছে, ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মূল পরিকল্পনাকারীও তিনি।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১১-এর সিপিসি-২-এর কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, “ঘটনার পর শাহ পরান আত্মগোপনে ছিলেন। আজ তাকে গ্রেফতার করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছবি ও ভিডিওসহ ডিজিটাল প্রমাণাদি উদ্ধার করা হয়েছে। ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার মূল ভূমিকা পালন করেছে শাহ পরান। বিস্তারিত তথ্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।”
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, “ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শাহ পরানের সম্পৃক্ততা পুলিশি তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে। ধর্ষণ মামলার এজাহারভুক্ত এই আসামিকে র্যাব গ্রেফতার করেছে এবং থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।”
পুলিশ ও র্যাব সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক বিরোধের জেরে শাহ পরান তার বড় ভাই ফজর আলীর ওপর প্রতিশোধ নিতে এই ভয়াবহ পরিকল্পনা করে। এতে সহায়তা করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী সুমনসহ আরও কয়েকজন। ঘটনায় সুমনসহ কয়েকজন আগেই গ্রেফতার হলেও শাহ পরান এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাকা লেনদেন নিয়ে ফজর আলী ও ওই নারীর পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে শাহ পরান ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করেন এবং একপর্যায়ে ফজর আলী ও নারীকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১১টার দিকে ফজর ওই নারীর বাড়িতে গেলে সংঘবদ্ধভাবে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ১৫-২০ জন অংশ নেয় বলে পুলিশ ধারণা করছে।
পুলিশ ইতোমধ্যে ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলীসহ সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিককে গ্রেফতার করেছে। ফজর আলী বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন। বাকি চারজনের মোবাইল থেকে উদ্ধার করা ভিডিও বিশ্লেষণ করে অন্যদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন জানান, “সন্দেহভাজন আরও ২০-২৫ জনের তালিকা রয়েছে। পুলিশ, ডিবি ও র্যাব মিলে এসব আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে।”
ঘটনার ভয়াবহতা ও সামাজিক চাপের কারণে ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। নিরাপদ ও গোপন স্থানে পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে অবস্থান করছে। তাদের সুরক্ষা ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওসি জাহিদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি ধর্ষণের, অন্যটি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে। পর্নোগ্রাফি মামলায় পাঁচজন নামীয় ও ২৫ জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার চারজনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শাহ পরানকেও একই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।