যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠকে বসছে অসলোতে, ইস্যু পারমাণবিক কর্মসূচি

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বৈঠকে অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।
তবে এখন পর্যন্ত বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখ চূড়ান্ত হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র বা ইরান— কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের কাছে অসলো ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা নেই।” একই সঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের মিশনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এই সম্ভাব্য বৈঠক যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা হতে যাচ্ছে। গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় নজিরবিহীন সামরিক হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সদ্যসমাপ্ত ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ও যুদ্ধবিরতির পর স্টিভ উইটকফ ও আরাঘচির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। ওই যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বাস্তবায়িত হয়, যেখানে ওমান ও কাতারের কর্মকর্তারাও ভূমিকা পালন করেন।
ইরান প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও বর্তমানে কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল ১২ এই বৈঠক নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এদিকে, ইরানের হাতে বর্তমানে প্রায় ৪০৮.৬ কেজি (৯০০ পাউন্ড) উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যার পরিমাণ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ। যদিও এটি পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার নিচে, তথাপি যথেষ্ট পরিমাণে সমৃদ্ধ করলে এর দ্বারা ৯টির বেশি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব বলে মনে করছেন মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
তাদের দাবি, এসব ইউরেনিয়াম বর্তমানে নাতাঞ্জ ও ফোরদোর সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ইসফাহানের ভূগর্ভস্থ সুরঙ্গে সংরক্ষিত আছে। এসব কেন্দ্র ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক যৌথ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তেহরান সম্প্রতি পার্লামেন্টে গৃহীত নতুন একটি আইনের বাস্তবায়ন শুরু করেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (Twitter) দেওয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি বলেন, “ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) এবং এর সুরক্ষা চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তিনি জানান, “ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ হামলার প্রেক্ষিতে নতুন আইন অনুযায়ী, আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা এখন থেকে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।”