বিশ্বে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করছে যেসব দেশ

বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় বেড়েই চলেছে, শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন
বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১৮ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধির হার ১৯৮৮ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এক দশকে সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজা সংঘাত এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র উত্তেজনা এ ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি একাই প্রায় ৯৯৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের ৩৭ শতাংশ। এই ব্যয়ের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় খরচ হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকায়ন, সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন ও ইসরায়েলের জন্য অর্থ সহায়তা। গত বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটি সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৩১৪ বিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক ব্যয়ের ১২ শতাংশ। চীন গত এক বছরে নতুন স্টেলথ যুদ্ধবিমান, ড্রোন, এবং পরমাণু অস্ত্র মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি মহাকাশ ও সাইবার বাহিনী গঠন করেছে। ২০১৫ সালের তুলনায় দেশটির সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৫৯ শতাংশ।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া, যার সামরিক ব্যয় ছিল ১৪৯ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানোর জন্য ব্যাপক অস্ত্র খাতে বিনিয়োগ করেছে। এক বছরে তাদের সামরিক খরচ বেড়েছে ৩৮ শতাংশ এবং এক দশকে তা বেড়েছে দ্বিগুণ।
জার্মানি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। দেশটির সামরিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। তারা নতুন অস্ত্র ক্রয় ও সামরিক গবেষণায় ব্যয় করেছে। একই সঙ্গে জার্মানি ইউক্রেনকে দিয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা।
ভারতের অবস্থান পঞ্চম। দেশটি সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৮৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। ভারত এখন দেশীয়ভাবে অস্ত্র উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টার ও সাবমেরিন নিজেই তৈরি করছে দেশটি, যদিও যুদ্ধবিমানসহ কিছু উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র এখনো আমদানি করতে হচ্ছে।
ছয় নম্বরে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যার সামরিক ব্যয় ৮১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। সাত নম্বরে রয়েছে সৌদি আরব, যার ব্যয় ৮৩ বিলিয়ন ডলার হলেও ২০১৫ সালের তুলনায় তাদের সামরিক ব্যয় ২০ শতাংশ কমেছে।
অষ্টম স্থানে থাকা ইউক্রেন ২০২৪ সালে সামরিক খাতে ৬৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে নবম স্থানে থাকা ফ্রান্সও। দশম অবস্থানে রয়েছে জাপান, যার সামরিক খরচ ছিল ৫৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। জাপানের সামরিক ব্যয় এক বছরে বেড়েছে ২১ শতাংশ এবং এক দশকে বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ।
এই তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট যে, বিশ্বে সামরিক শক্তির প্রতিযোগিতা নতুনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলো অস্ত্র, প্রতিরক্ষা, এবং কৌশলগত আধিপত্য বিস্তারে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও শান্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে।