ডাকসু গঠনতন্ত্রে আংশিক সংস্কার, ছাত্র সংগঠনের মূল দাবিগুলো উপেক্ষিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্রে সাম্প্রতিক সংস্কারে ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামত উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে ‘চূড়ান্ত সংশোধনী প্রস্তাব’ পাস হয়, যেখানে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, কার্যাবলির পরিধি এবং নেতৃত্ব কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, শুধুমাত্র পূর্ণকালীন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তিকৃত ও আবাসিক শিক্ষার্থীরাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন এবং ভোটারের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডাকসুর উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধ ছাড়াও সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, সামাজিক সেবা, ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ যুক্ত করা হয়েছে। সদস্যপদের যোগ্যতা সীমিত করা হয়েছে কেবল প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
নেতৃত্ব কাঠামোতে পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে, ভিসি এখন শুধুমাত্র কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন এবং ডাকসুর কার্যক্রম তদারক করবেন। জরুরি ভিত্তিতে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে তিনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন। ভিপি ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকলে সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ—তাদের প্রস্তাবগুলো, বিশেষ করে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি ও নিয়মিত নির্বাচন বাধ্যতামূলক করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়নি। ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রশাসনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও ছাত্রবান্ধব সংস্কার না হওয়ার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে।
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন অভিযোগ করেন, তাদের প্রস্তাবনা উপেক্ষা করা হয়েছে এবং ভিসির হাতে এখনও চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে। তারা নিয়মিত নির্বাচন, শিক্ষার্থী সভাপতি এবং ভিপি-জিএস পদে একাধিক প্রতিনিধি চাইলেও তা গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, প্রশাসন অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করলেও তাদের মতামত আমলে নেয়নি। তিনি নিয়মিত নির্বাচনকে বাধ্যতামূলক করা, নির্বাচিত ছাত্রকে সভাপতি করা এবং ভিসির ক্ষমতা সীমিত করার পক্ষে মত দেন। এসব বাস্তবায়নে প্রশাসনের অনীহাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেন তিনি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মোজাম্মেল হক কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনকে স্বাগত জানালেও বলেন, ভিসির একচ্ছত্র ক্ষমতা এখনও বহাল আছে। সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসনিক আধিপত্য কমেনি। এছাড়া, বাইরের প্রচারণা নিষিদ্ধের বিধান বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আচরণবিধিতেও বেশ কিছু কঠোর নিয়ম সংযোজন করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা ও প্রত্যাহারের সময় মিছিল নিষিদ্ধ, পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে জমা দেওয়া যাবে না, যানবাহন ব্যবহার করে প্রচার নিষিদ্ধ। প্রচার চালানো যাবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এবং প্রজেকশন মিটিংয়ের সংখ্যা সীমিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার আইনসিদ্ধ ও ইতিবাচক হতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিল, অর্থদণ্ড এবং বহিষ্কারের বিধান রাখা হয়েছে।