রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ১ ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার না হলে টিকবে না: নাহিদ চট্টগ্রামের ভাষায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে উচ্ছ্বসিত রোহিঙ্গারা ঘরে ফেরার স্বপ্নে বিভোর জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক: নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির ন্যূনতম মজুরি: বিক্ষোভ-কর্মবিরতিতে ট্যানারিতে উৎপাদন ব্যাহত দেশের ব্যাংক খাতে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দিনের ছুটি ঘোষণা! রাজশাহীতে পদ্মা ও বাংলাবান্ধা ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ ধর্ষকের বিচার ৯০ দিনে নয়, সাত দিনে দেখতে চাই: জামায়াত আমির চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ, এলো ২৬ হাজার টন আতপ চাল জামালপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ গাজীপুরে ট্রাকের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রীসহ নিহত তিন হাইকোর্টে আবরার ফাহাদ হত্যার রায় রোববার রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত গুতেরেসের ‘৪১ দেশের’ ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ভাবনা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ট্রাম্পবিদ্বেষী’ দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করল যুক্তরাষ্ট্র

ইসলাম

ঘটনার ঘনঘটা : প্রয়োজন চিন্তাশীলতা ও দায়িত্বশীলতা

 আপডেট: ২০:৫২, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১

ঘটনার ঘনঘটা : প্রয়োজন চিন্তাশীলতা ও দায়িত্বশীলতা

আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটে চলেছে তা আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। এ কথাটা অবশ্য নতুন কোনো কথা নয়, আমাদের সালাফ বারবার তা বলেছেন, নিজ নিজ সময়ের মানুষকে এ সত্যের ব্যাপারে সচেতন করেছেন। এটাকে তাঁরা মনে করতেন কুরআন মাজীদের সেই আদেশের আনুগত্য, যাতে ‘তাযকীর’ বা স্মরণ করিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কুরআন মাজীদেও চিন্তাশীল মানুষকে নিজ সত্তা ও চারপাশের ঘটনাবলি, প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে সচেতনতার বার্তা গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই মুমিনের কর্তব্য, চিন্তাশীলতার সাথে তার নিজের ও চারপাশের পরিবর্তনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা। বিশেষত যারা দ্বীনের ধারক ও বাহক,  ইলমে দ্বীনের তালিব ও অন্বেষী, তাদের জন্য তো এই সচেতনতা ও চিন্তাশীলতা আরো বেশি কাম্য।

মানুষের জীবনে সময় থেমে থাকে না। নিদ্রা ও জাগরণ, সচেতনতা ও অসচেতনতা উভয় অবস্থাতেই তা নদীর স্রোতের মতো প্রবাহিত হতে থাকে। স্বাভাবিক নিয়মেই অনিবার্য পরিবর্তনগুলো আসতে থাকে। শৈশব, কৈশোর, এরপর যৌবন ও বার্ধক্যের স্তরগুলো মানুষ একে একে অতিক্রম করতে থাকে। এরপর দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে গেলে আখেরাতের জীবনে চলে যেতে হয়। জীবনের এই প্রবহমানতা এক অনিবার্য বাস্তবতা। আমাদের কর্তব্য, এর অন্তর্নিহিত বার্তাগুলো উপলব্ধি করা।

আমাদের চারপাশ থেকে বড় বড় আলিম বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে চলে গেলেন দারুল উলুম দেওবন্দের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস বিদগ্ধ মনীষী ব্যক্তিত্ব হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান আ‘যমী ও দারুল উলূমের মুহাদ্দিস ও নায়েবে মুহতামিম হযরত মাওলানা আবদুল খালেক সাম্ভালী রাহিমাহুমাল্লাহ। অতি সম্প্রতি বিদায় নিয়ে গেলেন দারুল উলূম হাটহাজারীর শায়খুল হাদীস, হেফাযতে ইসলামের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশ-বিদেশের অনেক মনীষী ব্যক্তিত্ব বিদায় নিয়ে গেছেন। তাঁদের শূন্যস্থান কীভাবে পূরণ হবে, কাদের মাধ্যমে পূরণ হবে তা মহান আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। তাঁর ইচ্ছায় সবকিছু হয় ও হবে। তবে মুমিন হিসেবে ও তাঁর দ্বীনের ধারক-বাহক হওয়ার সৌভাগ্য-প্রত্যাশী হিসেবে আমাদের কর্তব্য, হক্কানী রব্বানী উলামায়ে কেরামের বিদায়ের এই ধারা থেকে সতর্কতা ও সচেতনতার বার্তা গ্রহণ করা।

হাদীস শরীফ আমাদের জানায় যে, ইলমের বিদায় ঘটবে উলামায়ে উম্মতের বিদায়ের মাধ্যমে। কাজেই উলামায়ে কেরামের বিদায় ছোটখাটো ব্যাপার নয়। তাঁদের বিদায় যেন শূন্যতার সমার্থক না হয় সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া কর্তব্য।

এই কর্তব্য সাধারণভাবে সবার। মুসলিম উম্মাহর সকল শ্রেণিকে ইলমে দ্বীনের চর্চা ও বিস্তারের ধারা বেগবান ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। দ্বীনী ইলম চর্চার স্বাভাবিক ধারাটি যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, অন্যায় অপপ্রচার, অসহযোগিতা বা প্রতিকূলতার শিকার না হয়; বরং তা সত্যিকার অর্থেই গুণে-মানে উন্নত থেকে উন্নততর হতে পারে সেজন্য মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক শ্রেণিকে আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইলমে দ্বীন চর্চার এই ধারা অব্যাহত রাখা গোটা মুসলিমসমাজের উপর ফরয। আলিম হওয়া সবার উপর ফরয নয়, কিন্তু সমাজে ইসলামী সকল শাস্ত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিজ্ঞ ও পারদর্শী আলিম তৈরির ব্যবস্থা করা সবার উপর ফরয। ইলমের অভিযাত্রা তাই গোটা মুসলিমসমাজের অভিযাত্রা। এক্ষেত্রে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও মুসলিম জনতা পরস্পর সতীর্থ ও সহযোগী। ইলমে দ্বীনের সূত্রে গোটা মুসলিম সমাজের এই যে আত্মীয়তা- এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং এই আত্মীয়তার হক্ব আদায় করা আমাদের কর্তব্য।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, দ্বীনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যেসকল ক্ষেত্রে আমাদের মুসলিমসমাজে অজ্ঞতা ও প্রজ্ঞাহীনতার বিস্তার ঘটেছে তন্মধ্যে উপরোক্ত বিষয়টি অন্যতম। এখন তো খুব অল্প কিছু সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ছাড়া মুসলিমসমাজের বিরাট অংশ ইলমে দ্বীন চর্চার এই ধারার সাথে নিজেদের একাত্ম করতে পারছেন না। সতীর্থ না হয়ে তারা নিজেদের নিয়ে গেছেন প্রতিপক্ষের জায়গায়। উম্মাহর মাঝে চিন্তা-চেতনা, রুচি-প্রকৃতি, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গিগত এই বিরাট বিভাজন কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল, এর পেছনের মৌলিক কারণগুলো কী- তা যদি আলোচনা করা হয়, তাহলে সে আলোচনার এক বিরাট অধ্যায় হবে আমাদের অমার্জনীয় সারল্য আর ইসলামের শত্রুদের জঘন্য কূটকৌশলের এক মর্মান্তিক দাস্তান। সে দাস্তান অন্য অবসরের জন্য তোলা থাকুক, আপাতত উম্মাহর মধ্যকার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত এই বিশাল দূরত্বের যে ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এই দূরত্বেরই তো ফল পৃথিবীর নানা স্থানের মজলুম মুসলমানের ব্যাপারে উম্মাহর দায়িত্বশীল পর্যায়ে অমার্জনীয় নীরবতা ও নির্লিপ্ততা। অথচ মুসলমানেরই কোনো একটি অংশ যখন সম্পূর্ণ স্বউদ্যোগে চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করে, অশ্রু ও রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে, বর্ণবাদী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তিকে নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয় তখন তাদের বিরুদ্ধে মুসলিমসমাজের মিডিয়াগুলোতেই বিষোদ্গার ও প্রপাগান্ডার ঝড় বইতে থাকে। এত দিনের ঘুমন্ত মিডিয়া হঠাৎ করেই সম্পূর্ণ সজাগ হয়ে ওঠে। প্রশ্ন হচ্ছে, নিদ্রা ও জাগরণ, নীরবতা ও সরবতার এই ঘৃণ্য মানদ- ও এহেন ন্যক্কারজনক প্রয়োগ আর কোনো সমাজে  দেখা যাবে কি?

আমাদের কি চিন্তা করা উচিত নয়, মুসলিম-সমাজের চিন্তা-চেতনা, আচরণ-উচ্চারণে তৈরি হয়ে যাওয়া এই বিরাট বিভাজন কীভাবে মোচন করা যায়? কীভাবে আবার মুসলিম উম্মাহ একদেহ একপ্রাণ হয়ে উঠতে পারে, একের সুখে সবাই সুখী, একের দুঃখে সবাই দুঃখী হতে পারে? বিজয় ও সাফল্যে অভিনন্দন ও সুপরামর্শ, কষ্ট ও ব্যর্থতায় সমবেদনা ও সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারে? একসময় তো মুসলিম উম্মাহ চিন্তা-চেতনায়, আচরণ-উচ্চারণে এরকমই ছিল। সে সময়টিই ছিল উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সময়। সেই সুদিন যেন আবারো উম্মাহর জীবনে ফিরে আসে সেই চেষ্টাই আমাদের করে যেতে হবে।

এই গুরুদায়িত্ব পালনে যেসব বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে তার একটি হচ্ছে, ‘আখলাকে হাসানা’। উত্তম আখলাক। মনে রাখতে হবে, পশ্চিমা শিক্ষা ও প্রচার-প্রপাগান্ডায় মুসলিম সমাজের যে বিরাট শ্রেণিটির মতিভ্রম ঘটেছে তারাও আমাদের ভাই। উত্তম আখলাকের মাধ্যমে তাদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে। ঘরে ফেরানোর এই মহৎ মানবিক দায়িত্ব প্রধানত যাদের পালন করতে হবে, তারা হচ্ছেন কুরআন-সুন্নাহর ধারক-বাহক শ্রেণি। তাঁদেরই হাতে দেয়া হয়েছে আসমানী আলোকবর্তিকা। সব রকমের অস্বীকৃতি-অকৃজ্ঞতা, অবজ্ঞা-তাচ্ছিল্য, অন্যায়-অবিচার সয়েও উম্মাহর প্রতি কল্যাণকামিতার নববী মীরাছের তাঁরাই অধিকারী। দাওয়াত ইলাল্লাহর এই মহান দায়িত্ব পালনে আমরা কি প্রস্তুত?

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মহান পূর্বসূরিগণের যোগ্য উত্তরসূরিরূপে কবুল ও মাকবুল করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন!

অনলাইন নিউজ পোর্টাল