বিদেশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জটিলতা দুর্নীতির সুযোগ তৈরির জন্য: আসিফ নজরুল

‘দুর্নীতির সুযোগ তৈরিতেই বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল’ — আসিফ নজরুল
বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়াকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জটিল ও দীর্ঘ করে রাখা হয়েছে, যাতে দুর্নীতি ও অপচয়ের সুযোগ তৈরি হয়—এ মন্তব্য করেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘জাপানে নতুন শ্রমবাজার: কর্মী প্রেরণের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, “সরকারি কোনো কাজে ১০–১২টি সিগনেচার লাগে, যার প্রয়োজন নেই। খামোখা এসব সিগনেচারের জন্য চাকরি দেওয়া হয়। দুর্নীতি করার সুযোগ রাখতেই প্রক্রিয়া জটিল রাখা হয়। প্রক্রিয়া সহজ করলে দুর্নীতি বন্ধ হবে, খরচও কমবে।”
তিনি বলেন, “সরকারি অফিসে অর্ধেক লোক কাজ না করেই বসে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়েও অর্ধেক শিক্ষক অতিরিক্ত। এসব নিয়োগ আওয়ামী লীগ–বিএনপির লোক ভরার মানসিকতা থেকেই হয়েছে।”
জাপানে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “জাপানিদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে দেশে কোনো দাপ্তরিক জটিলতা না থাকে। প্রয়োজনে কোনো প্রক্রিয়াই রাখব না। যা করার জাপানিরাই করবেন।”
তিনি জানান, ভাষা ও দক্ষতার অভাবে জাপানে পর্যাপ্ত কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যে যেমন দক্ষতা ও ভাষা জরুরি নয়, জাপানে তা আবশ্যক। তাই সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (PPP) প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেবে বলে জানান তিনি।
অসুস্থ প্রশাসনিক কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা এমন এক প্রশাসনযন্ত্র, যেটা কোনো পরিবর্তন চায় না। বড় সংস্কার প্রয়োজন, যা ৫–১০ বছরও লাগতে পারে। আমরা শুরু করতে পারি, শেষ করতে পারব না।”
প্রবাসী শ্রমিকদের অপরাধমূলক কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, “কিছু অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে কিছু দেশে আমাদের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মারামারির জন্য সিলেট–ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়। এসব বিষয়ে প্রবাসীদের সচেতন হতে হবে।”
স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক গ্যারান্টির অভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কিছু বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এছাড়া প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণ চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ভেতরেই সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পরিকল্পনার সঙ্গে কাজের বাস্তবতা মিলছে না।”
সেমিনারে আইএলওর পলিসি অ্যাডভাইজর জিয়া হাসান জানান, করোনার পর থেকে প্রতিবছর নেপাল জাপানে ৫০ হাজারের বেশি কর্মী পাঠাচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে মাত্র ৪–৫ হাজার। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে ১৬টি বিশেষ খাতে দক্ষ সোয়া ৮ লাখ কর্মীর চাহিদা থাকবে।
সেমিননে আরও উপস্থিত ছিলেন আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ল্যান্স বোনো, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া এবং বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধিরা।