জুলাই শহীদদের স্মরণে আয়োজনে বিতর্ক, খুলনায় ছাত্রদের ক্ষোভ

খুলনায় ‘জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে’ আয়োজিত এক দোয়া মাহফিল ঘিরে দেখা দিয়েছে চরম বিতর্ক। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ মাহফিলে বাদ পড়েছেন সেইসব আন্দোলনকারী ও সংগঠকেরা, যারা ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং হামলার শিকার হয়েছেন। অথচ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এমন কিছু ব্যক্তিকে, যাদের নিয়ে আন্দোলনের ভেতরেই রয়েছে বিতর্ক, এমনকি অনেককে সরকারঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে খুলনা নগরীর কালেক্টর মসজিদে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার, শহীদ সাকিব রায়হানের পিতা এবং আন্দোলনে চোখ হারানো আব্দুল্লাহ আল শাফিল। মূলত এই আয়োজনটি ছিল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনার উদ্দেশ্যে, কিন্তু ঘটনাস্থলে এক শিক্ষার্থীর প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে ভিন্ন মাত্রা পায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক কর্মী দোয়া মাহফিলে এসে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তার অভিযোগ, এই আয়োজন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা ও আন্দোলনের মূল সংগঠকদের। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক প্রকৃত যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে "আওয়ামী লীগের দোসর" ও "গুপ্ত সংগঠনের ছাত্রদের" নিয়ে এই মাহফিল করেছেন। তার ভাষায়, “যাদের দাওয়াত করা হয়েছে তারা চোর বাটপার।”
প্রতিবাদকারী আরও বলেন, “জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক কিংবা সহ-সমন্বয়কদের কাউকেই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি। এটা একপেশে আচরণ ও চরম স্বেচ্ছাচারিতা।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সূত্রপাত আজকের ঘটনা নয়। এর আগেও ৩৬ দিনের এক কর্মসূচির অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরবর্তীতে তারা ডিসির অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং এক সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ঘটনার বিষয়ে বলেন, “দোয়া মাহফিল চলাকালে একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন, এখানে যাদের দাওয়াত করা হয়েছে তারা চোর বাটপার। এতে শহীদ সাকিবের বাবা কেঁদে ফেলেন, শাফিল কষ্ট পান। আমরা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছি এবং আহতদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইফ নওয়াজ বলেন, “সরকারি এ অনুষ্ঠানে শাফিল ও শহীদ সাকিবের বাবা ছিলেন। সেখানে ছাত্রদলের একজন এসে অপমানজনক মন্তব্য করেছে। আমরা তার নিন্দা জানাই।” তিনি আরও জানান, সরকারি অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তারা তার পক্ষে থাকবেন।
অন্যদিকে আন্দোলনের খুলনা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপী বলেন, “শহীদ স্মরণে আয়োজিত এমন মাহফিলে প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি থাকতে হবে। অথচ এখানে এমন কাউকেই ডাকা হয়নি। এটি কোনো বিরোধ নয়, বরং প্রকৃত যোদ্ধাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ।”
শহীদদের স্মরণে আয়োজিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিভেদের কারণ হয়ে দাঁড়ানোয়, খুলনার রাজনৈতিক ও ছাত্র অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, একটি পবিত্র আয়োজনেও যদি স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ ওঠে, তবে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে শহীদদের প্রতি প্রকৃত সম্মান?