হাঁটার সময় মানুষ যেসব ভুল করে এবং কেন এগুলো বিপজ্জনক

আমরা প্রতিদিনই কমবেশি হাঁটি। এটি শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম সহজ ও কার্যকর উপায়। তবে, আমাদের হাঁটার পদ্ধতিতে কিছু ছোট ভুল থাকতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যথা, আঘাত এবং শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অজান্তেই অনেক মানুষ এমন কিছু ভুল করে, যা হাঁটার উপকারিতা কমিয়ে দেয় এবং শারীরিক ঝুঁকি বাড়ায়। এখানে ১০টি সাধারণ হাঁটার ভুল ও সেগুলোর ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করা হলো—
১. বারবার নিচের দিকে তাকানো
বিপদ: ঘাড়ে চাপ, দেহের ভঙ্গি খারাপ হওয়া, হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকি।
কেন ক্ষতিকর: হাঁটার সময় বারবার নিচের দিকে তাকালে ঘাড় ও কাঁধে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্যথা ও স্টিফনেসের কারণ হতে পারে। এটি মেরুদণ্ডের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং আমাদের শরীরের ভঙ্গি খারাপ করে দেয়। এছাড়াও, রাস্তার উঁচু-নিচু জায়গা ভালোভাবে দেখতে না পাওয়ায় হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. বড় পদক্ষেপ নেওয়া (ওভারস্ট্রাইডিং)
বিপদ: হাঁটু, কোমর ও গোড়ালিতে বাড়তি চাপ, পেশির ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, আঘাতের ঝুঁকি।
কেন ক্ষতিকর: অনেকেই মনে করেন বড় পদক্ষেপ নিলে দ্রুত হাঁটা যাবে, কিন্তু এটি হাঁটুর ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ব্যথা হতে পারে এবং হাঁটার স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়। বরং, স্বাভাবিক ও ছোট ছোট পদক্ষেপ নেওয়াই ভালো।
৩. হাত ব্যবহার না করা
বিপদ: কম ক্যালোরি খরচ, ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, হাঁটার কার্যকারিতা কমে যাওয়া।
কেন ক্ষতিকর: হাঁটার সময় হাত একদম স্থির রাখা বা অতিরিক্ত দোলানো শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে। হালকা ও নিয়ন্ত্রিতভাবে হাত দোলালে ভারসাম্য বজায় থাকে, গতি বাড়ে এবং ক্যালোরি বেশি খরচ হয়।
৪. ভুল ভঙ্গিতে হাঁটা
বিপদ: পিঠের ব্যথা, ঘাড় ও কাঁধে টান, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া।
কেন ক্ষতিকর: ঝুঁকে বা কুঁজো হয়ে হাঁটলে পেটের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি হয়। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি হতে পারে এবং হাঁটার কার্যকারিতা কমে যায়। তাই সোজা হয়ে, কাঁধ রিল্যাক্স করে ও পেটের পেশি সক্রিয় রেখে হাঁটতে হবে।
৫. ভুল জুতা পরা
বিপদ: ফোসকা পড়া, পায়ে ব্যথা, জয়েন্টে চাপ, পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি।
কেন ক্ষতিকর: সঠিক সাপোর্ট ছাড়া জুতা (যেমন—স্যান্ডেল, হাই হিল বা বেশি শক্ত জুতা) পরলে পায়ে চাপ পড়ে, ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে জয়েন্টের সমস্যা হতে পারে। হাঁটার জন্য আরামদায়ক, কুশনযুক্ত ও আর্চ সাপোর্টযুক্ত জুতা পরা উচিত।
৬. ব্যথাকে অবহেলা করা
বিপদ: আঘাত গুরুতর হওয়া, দীর্ঘমেয়াদে ব্যথা, সুস্থ হতে বেশি সময় লাগা।
কেন ক্ষতিকর: শরীর যদি হাঁটার সময় ব্যথার সংকেত পাঠায়, তবে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। সামান্য ব্যথা অবহেলা করলে তা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর চোটে পরিণত হতে পারে। তাই ব্যথা অনুভব করলে বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
৭. ওয়ার্ম-আপ ও কুল-ডাউন না করা
বিপদ: পেশি টান ধরা, আঘাতের ঝুঁকি, ব্যথা।
কেন ক্ষতিকর: সরাসরি হাঁটা শুরু করলে পেশিগুলোর ওপর আকস্মিক চাপ পড়ে, যা আঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার হাঁটার পরপরই বিশ্রাম নিলে পেশিগুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই হাঁটার আগে ধীরে ধীরে শুরু করা এবং শেষে হালকা স্ট্রেচিং করা উচিত।
৮. হাঁটার সময় মনোযোগ না দেওয়া (বিশেষত ফোন ব্যবহার করা)
বিপদ: হোঁচট খাওয়া, দুর্ঘটনা, রাস্তা পার হতে সমস্যা, খারাপ ভঙ্গিতে হাঁটা।
কেন ক্ষতিকর: ফোনে মনোযোগ দিয়ে হাঁটলে আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা কমে যায়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে এবং শরীরের ভঙ্গিও খারাপ হয়ে যায়। তাই হাঁটার সময় ফোন ব্যবহার না করাই ভালো।
৯. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
বিপদ: পানিশূন্যতা, পেশির টান, ক্লান্তি।
কেন ক্ষতিকর: হাঁটার সময় শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়, বিশেষ করে গরমের সময়। পানি কম খেলে মাথা ঘোরা, পেশি টান ধরা এবং ক্লান্তিবোধ হতে পারে। তাই হাঁটার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
১০. অতিরিক্ত হাঁটা
বিপদ: আঘাত, হাঁটার প্রতি অনীহা, অতিরিক্ত চাপের ফলে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া।
কেন ক্ষতিকর: হাঁটা শরীরের জন্য ভালো, তবে অতিরিক্ত হাঁটলে পায়ের পেশি ও হাড়ের ওপর চাপ পড়ে। এতে স্ট্রেস ফ্র্যাকচার, শিন স্প্লিন্ট বা ক্লান্তিবোধ হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে হাঁটার সময় ও গতি বাড়ানো উচিত।
উপসংহার:
সঠিকভাবে হাঁটা শুধু শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে ভালো স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই সাধারণ ভুলগুলো সংশোধন করে আমরা আরও উপকারী ও নিরাপদ হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।