মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, কার্তিক ৭ ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ব্রেকিং

বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান: পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ দফা জনগণ যেন কুয়াশার মধ্যে আছে: রিজভী নভেম্বরে সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নয়, ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা বন্ধ বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ,আশুলিয়ায় দুদিনের বিক্ষোভে ভোগান্তি চরমে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রুল শুনানি ৩০ অক্টোবর বিশ্ব ইজতেমা আগামী জানুয়ারিতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আন্দোলনে নিহতদের পরিবার-আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে রুল পর্যটন দ্বীপ মনপুরাকে রক্ষায় ১ হাজার ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ ‘নাশতা নিয়ে হইচই করায়’ অব্যাহতি ২৫২ জন ক্যাডেট এসআইকে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পথে এক ধাপ এগোল জামায়াত ব্যারিস্টার সুমন ৫ দিনের রিমান্ডে লিবিয়া থেকে ফিরলেন ১৫৭ বাংলাদেশি

ইসলাম

সততা ও ক্ষমাশীলতার এক বিরল দৃষ্টান্ত

মুফতি জাওয়াদ তাহের

 প্রকাশিত: ১০:০৪, ৩ অক্টোবর ২০২৩

সততা ও ক্ষমাশীলতার এক বিরল দৃষ্টান্ত

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) অষ্টম হিজরির মুসলিম সংস্কার ও বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকে এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ মেধাবী বলা হয়। তিনি আজীবনের শত্রুকেও যেভাবে ক্ষমা করেছেন, তা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। তিনি যেভাবে মানুষকে বলেছেন, ‘আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি।’  বাস্তবে তিনি এই কথার মূর্তপ্রতীক ছিলেন।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর সময়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী একজন আলেম ছিলেন—আলী ইবনে ইয়াকুব বাকরি। আলী বাকরি ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর বিভিন্ন ধরনের ভুল ধরার পেছনে লাগেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু করেন।

এমনকি ইবনে তাইমিয়া (রহ.) কাফির হয়ে গেছে—এমন কথাও প্রচার করতে থাকে। নানাভাবে ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর সম্মানহানির অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। আলী বাকরি ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর পেছনে ক্ষমতাশীনদের লাগিয়ে দেন। বিভিন্নভাবে তার নামে প্রপাগাণ্ডা ছড়াতে থাকে।

এ জন্য তিনি বন্দিত্বের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হন। এভাবেই ক্রমে ক্রমে ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর ওপর পরীক্ষার মাত্রা বেড়েই চলছিল। কিন্তু সত্য কোনো দিন চুপ থাকে না। তা যেভাবেই হোক একদিন স্পষ্ট সূর্যের মতো উদয় হয়ে যায়। তখন যাঁরা ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন তাঁদের সামনেও ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর সত্যতা উন্মোচিত হয়।

এত দিন যাঁরা ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর বিপক্ষে ছিলেন, আজ ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর পক্ষ নিয়ে আল-বাকরিকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লাগলেন। একপর্যায়ে আলী বাকরিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর কাছে জানতে চাওয়া হয় যে আলী বাকরিকে কী শাস্তি দিলে তিনি খুশি হবেন! শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর জন্য সেটা ছিল সবচেয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ। কিন্তু ইবনে তাইমিয়া (রহ.) সেই সময়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে যে কথা বলেছিলেন তা শুনে যে কেউ হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নিজের জন্য কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করি না।’

তার এই সাদামাটা ও গভীর জবাব অনেকেই পছন্দ করল না। তাকে জোরাজোরি করতে লাগলেন তিনি যেন প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। এভাবে যেন আলী বাকরিকে ছেড়ে দেওয়া না হয়। তাদের এই জোরাজোরির ফলে ইবনে তাইমিয়া (রহ.) আরো বিশদভাবে তাদের বুঝিয়ে জবাব দেন। তিনি বলেন, আপনারা আমাকে শাস্তি দেওয়ার যে কথা বলেছেন, প্রতিশোধ নেওয়ার যে আহ্বান করেছেন—সেটার ব্যাপারে জেনে রাখুন। প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার হয়তো আমার, নয়তো আপনাদের, অন্যথায় একমাত্র আল্লাহ তাআলার। এখন সেই অধিকার যদি আমার হয়, তাহলে আপনারা শুনুন আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আর যদি অধিকার আপনাদের হয় তাহলে আপনারা আমার কাছে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাইবেন না। আপনাদের যা ইচ্ছা তা-ই করুন। আর শাস্তি দেওয়ার অধিকার যদি রাব্বুল আলামিনের হয়, তাহলে তিনি নিজেই তার থেকে হক আদায় করে দেবেন। যখন যেভাবে ইচ্ছা হয় সেভাবেই তিনি তাকে শাস্তি দিয়ে দেবেন।

তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমার ওপর মিথ্যারোপের কারণে কারো প্রতিশোধ নেওয়া—এটা পছন্দ করি না। সে জুলুম কিংবা শত্রুতা, যা-ই করুক না কেন। অবশ্যই মুসলিম-মাত্র সবাইকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আর আমি সব মুসলিমের জন্য কল্যাণ পছন্দ করি। নিজের জন্য যা পছন্দ করি, প্রত্যেক মুমিনের জন্য সেটাই পছন্দ করি। যারা মিথ্যা বলেছে, জুলুম করেছে, তারা সবাই আমার দিক থেকে মুক্ত। (মাজমুউল ফাতাওয়া : ২৮/৫৫)

আলী বাকরি গ্রেপ্তারের আগে কিছুদিন সে আত্মগোপনে ছিল। যখন আলী বাকরিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্মুখীন করা হয়, তখন তাকে বলা হলো তুমি এত দিন কোথায় আত্মগোপনে ছিলে। তাঁর জবাব শুনে সবার চোখ কপালে উঠেছিল সেদিন। আরী বাকরি জবাব দিলেন যে আমি এতদিন যার বিরুদ্ধাচরণ করেছি, সেই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (হ.)-এর বাড়িতেই লুকিয়ে ছিলাম। এই ছিল ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর ক্ষমার একটিমাত্র দৃষ্টান্ত। এভাবেই তিনি যত মানুষের শত্রুতার শিকার হয়েছেন সবাইকে ক্ষমা করে দেন নির্ভাবনায়।

মুসলিম বাংলা