কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে আজও বিক্ষোভ, আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতবিভেদ স্পষ্ট

খুলনায় উত্তাল রাজপথ, কেএমপি কমিশনার অপসারণে আন্দোলন এখন বিভক্ত দুই শিবিরে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিকে কেন্দ্র করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতা–কর্মীদের মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এক পক্ষ আন্দোলন চালিয়ে গেলেও অন্য পক্ষ দাবি করছে, তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ইতিমধ্যেই পূরণ হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয় এবং বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চালায়। সড়কের দুই পাশ অবরোধ করে তারা ‘জুলফিকারের চামড়া তুলব’, ‘খুলনা ছাড় এখনই’, ‘পুলিশ লীগের আস্তানা ভেঙে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকে।
বিক্ষোভে অংশ নেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর একাংশ, ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীরা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এসআই সুকান্তকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁরা খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ার জন্য কমিশনারকে দায়ী করছেন।
গত সপ্তাহে দুই দিনের আন্দোলন শেষে আন্দোলনকারীরা কমিশনার অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। সময়সীমা অতিক্রমের পর শনিবার থেকে আবারও সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয় একাংশ। তারা কেএমপির সদর দপ্তর ও বিভিন্ন থানা ঘেরাওয়ের হুমকি দেয়।
আজ আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক নেতা সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, “পাঁচ দিন ধরে আমরা রাজপথে আন্দোলন করছি। এটা কোনো দলের আন্দোলন নয়, খুলনার সাধারণ মানুষের আন্দোলন। এই আন্দোলনে ব্যক্তিস্বার্থ নয়, জনগণের নিরাপত্তা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা পুলিশ কমিশনারের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে জনগণ দাঁত ভাঙা জবাব দেবে।”
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য অংশ আজ দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে, আন্দোলনের উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ায় তারা সরে এসেছেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন, যা ‘জুলাই আন্দোলন’-এর লক্ষ্য নয়।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, “এসআই সুকান্ত গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। এখন যারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তারা নিজেদের স্বার্থে পরিস্থিতিকে ব্যবহার করছে। এর দায় আমরা নিতে পারি না।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার, জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম, জাস্টিস ফর জুলাই-এর প্রতিনিধি সাইফ নেওয়াজ, জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের জাহিদুল ইসলাম, পুসাব, ইনকিলাব মঞ্চ ও আপ বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আল শাহরিয়ার বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আইনের মাধ্যমেই বিচার হতে হবে। কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, সেটি আমাদের সংগঠনের অবস্থান নয়। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কিছু করলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।”