বৃষ্টির তীব্রতা থাকবে দুদিন, বাড়বে নদ-নদীর পানি
আশ্বিনের মাঝামাঝি এসে ফের বৃষ্টি বাড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর; সেই সঙ্গে সারা দেশে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি হ্রাস পেয়ে অস্বস্তিকর গরম কমার সুখবর এসেছে।
তবে বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন নদীর পানি বাড়ার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বৃষ্টি মূলত শুরু হয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে; বুধবার বরিশাল আর ঢাকার বড় একটা অংশ জুড়ে বৃষ্টি হবে, এভাবে সারাদেশে চলবে।
"তবে আগামী দুইদিন বৃষ্টিপাতের তীব্রতা থাকবে, এরপর থেকে কমে আসবে।"
আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, “ঢাকায় নিম্নস্তরের মেঘ দেখা যাচ্ছে। আকাশ মেঘলা থাকবে ও দিনের শেষ অংশে কিছুটা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঢাকার পূর্বাঅংশ যেমন নরসিংদী ও দক্ষিণ কুমিল্লা অংশে বৃষ্টি হওয়ার সুযোগ বেশি।”
মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এছাড়া রাঙামাটিতে ৪০, মাদারীপুরে ২৯ মিলিমিটারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে সেটি হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে সেটিকে বলা হয় অতিভারি বৃষ্টিপাত।
সোমবার মোংলায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমার আভাস এসেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।
আপাতত বন্যার ‘ঝুঁকি নেই’
ব্ন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আগামী তিনদিন সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের নদীর পানি বাড়বে। তবে আপাতত বন্যার ঝুঁকি নেই।"
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী তিন দিন সিলেট বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়তে। তবে বিপৎসীমার নিচেই থাকতে পারে।
মনু, খোয়াই, ধলাই ও যাদুকাটা নদীর পানিও বাড়ছে এবং সারিগোয়াইন ও কংস নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। অন্য দিকে ভুগাই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী তিন দিন সিলেট বিভাগের এসব নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানানো হয় বুলেটিনে।
সেখানে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী ও হালদা নদীর পানি বাড়ছে। ফেনী, মাতামুহুরী নদীর পানি স্থিতিশীল আছে; অন্যদিকে সাঙ্গু ও মুহুরী নদীর পানি কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী তিন দিন চট্টগ্রাম বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টি হতে পারে, এর ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের এসব নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে বইবে।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, রাজশাহী বিভাগের বাঙ্গালী, মহানন্দা ও ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। অন্যদিকে আত্রাই ও করোতয়া নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগের এসব নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুইদিন পানি কমতে পারে।
বন্যার পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, ওই বিভাগের গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে ও এর ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে, অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে।
পরবর্তী চার দিন গঙ্গা-পদ্মা দুই নদীর পানিই বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
তবে রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি কমছে ও এর ভাটিতে যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী দুই দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমতে পেতে পারে এবং পরবর্তী তিনদিন ধীর গতিতে বেড়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
আর রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিনদিন তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমতে পারে।
দেশের সব প্রধান নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বলা হয় বুলেটিনে।