জনগণ এতদিন বিভ্রান্তিকর উন্নয়নের বয়ানে ছিল:দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সরকার যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, সেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রতিনিধিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের’ আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্তি এবং তাদের ভোটের নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দপ্তর এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় ঢাকার জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান প্রমুখ।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রের কারণে আমাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাদের টুটি চেপে ধরা হয়েছিল। উন্নয়নের বয়ানের বিপক্ষে আমরা সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য কাজ করছি এবং নানা রকম প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছি। সে সময় জাতিসংঘ আমাদের সঙ্গে ছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কিছু লোক নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের সংখ্যা বড় না। কিন্তু তারা কাজটা করছে বড়ভাবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য আলাদা প্রতিশ্রুতি না থাকলে তারা সেই ইশতেহার গ্রহণ করবেন না।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্য দূরীকরণ প্রসঙ্গে সবাই বলছে এটি বৈষম্যবিরোধী পরিবর্তন, কিন্তু সব ধরনের বৈষম্য নিয়ে কি আলোচনা হচ্ছে? লিঙ্গ বৈষম্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈষম্য ও সুরক্ষা, নারীর বৈষম্য নিয়ে কি কথা হচ্ছে? হচ্ছে না।’
জনগণ এতদিন বিভ্রান্তিকর উন্নয়নের বয়ানে ছিল উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার সময় এসেছে। বাংলাদেশের গড় উন্নতি হলেও পার্থক্য রয়ে গেছে। উন্নয়নের সুবিধা সবাই সমানভাবে পায়নি। কারা উন্নয়নের সুবিধা পেয়েছে তা নির্ভর করেছে তাদের সামাজিক অবস্থান ও পরিচয়ের ওপর।’
তিনি বলেন, ‘গড় আয়ু বেড়েছে, কিন্তু গরিবদের গড় আয়ু বাড়েনি। স্কুলে অন্তর্ভুক্তি শতভাগ হয়েছে, কিন্তু গরিবদের সবাই এখনো স্কুলে যেতে পারে না। এজন্য সঠিক পরিসংখ্যান প্রয়োজন। সঠিক পরিসংখ্যান না হলে সবার জন্য কার্যকর নীতি প্রণয়ন সম্ভব হবে না।’
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।