শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

পদ্মা সেতু: বাগেরহাটে খুলবে পর্যটনের স্বর্ণ দুয়ার

 আপডেট: ১৫:২১, ২২ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু: বাগেরহাটে খুলবে পর্যটনের স্বর্ণ দুয়ার

পদ্মা সেতু চালু হলে বাগেরহাটে উন্মোচিত হবে পর্যটনের স্বর্ণ দুয়ার। বাগেরহাট পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও যোগাযোগ অবকাঠামোর অভাবে পিছিয়ে ছিল বাগেরহাট। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে এ চিত্র বদলে যাবে। সহজে রাজধানীসহ সমগ্র বাংলাদেশে যাতায়াত সুবিধার কারণে দেশি বিদেশি পর্যটকের সমাগম বাড়বে। এসব পর্যটন এলাকা ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলবে।

বাগেরহাট ষাটগম্বুজ যাদু ঘরের কাষ্টডিয়ান মোঃ যায়েদ বলেন, প্রত্নসম্পদ আর পুরাকির্ত্তীর শহর বাগেরহাট।এখানে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া ষাটগম্বুজ মসজিদ ও বিশ্বের জীববৈচিত্রের বৃহত্তম আধার ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন । এখানে আরো রয়েছে খানজাহান আলী ( রঃ) মাজার ও দিঘি, অযোধ্যা মঠ, মোড়েল স্মৃতিসৌধের মত মধ্যযুগীয় অপূর্ব স্থাপত্যকলার নিদর্শন।
 
এছাড়াও বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহাসিক স্থাপত্য শিল্পকলার নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিবি বেগমী মসজিদ, চুনখোলা মসজিদ, রেজাখোদা মসজিদ, ঘোড়া দীঘি, পচা দীঘি, পিসি রায়ের মুর্তি, জিন্দা পীরের মাজার, পগল পীরের মাজার, ঠান্ডা পীরের মাজার প্রভৃতি উলে¬খযোগ্য। অসংখ্য পুণ্যার্থী ও সৌন্দর্য পিপাসুদের কাছেটানে বাগেরহাটের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ। এ  বছরে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার দেশি বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। ।্ পদ্মা সেতু চালু হলে যাতায়েত সুবিধার কারণে  দেশি বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুন হবে বলে আশা করেন তিনি।তিনি আরো বলেন পদ্মা সেতু চালু হলে উন্মোচিত হবে পর্যটনের স্বর্ণ দুয়ার। এর ফলে বিপুল পরিমান  রাজস্ব আয় হবে। 

বাগেরহাট ষাটগম্বুজ যাদু ঘরের কাষ্টডিয়ান মোঃ যায়েদ আরো বলেন, প্রত্নসম্পদ আর পুরাকির্ত্তীর শহর বাগেরহাট।খান জাহান আলী (রঃ) সম্ভবত গৌড়ের সুলতান নাছির উদ্দিন শাহের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সেনানায়ক ছিলেন। এ জ নপদ আবাদসহ এক রাজ্য বিস্তার করে তিনি ইসলাম প্রচার ও শাসন এর পাশাপাশি তিনি মানব প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে যশোরের বারোবাজার থেকে শুরু করে এ অঞ্চল জুড়ে ৩৬০ টি মসজিদ ও ৩৬০ টি দীঘি খনন করেন। খান জাহান আলী (রঃ) দীঘির উত্তরপাড়ে এ পুণ্যাত্ম আল্লাহর ওলির মাজার শরীফ ও সমাধি সৌধ নির্মিত হয়। জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত ও পর্যটক ১৪৫৯ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে এ মাজারে আসেন জিয়ারতে। হযরত খান জাহান আলী (রঃ) মাজার সংলগ্ন প্রায় ৬১.৭৫ একর জমি জুড়ে এ দীঘি অবস্থিত। এ দীঘিতে ‘ধলা পাহাড় ও ‘কালা পাহাড়’ নামক কুমির । ‘ধলা পাহাড় ও ‘কালা পাহাড়’ বলে ডাকলে আজও তারা দীঘির ঘাটে আসে।
 
খান জাহান আলী (রঃ) অমর কীর্তি ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ। লাল পোড়ামাটির ওপর লতাপাতায় অলংকরণে মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শিল্পে এ মসজিদ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মসজিদের গম্বুজগুলো ইট ও পাথরের ৬০ টি খাম্বা বা পিলারের ওপর নির্মিত। এ কারণে এর নাম হয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদ। মসজিদটিতে গম্বুজ রয়েছে ৭৭ টি। ইমারতের গঠন ও বৈচিত্র্যে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এর দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট এবং প্রস্থ ১০৮ ফুট। ইউনেস্কো ষাট গম্বুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভূক্ত করেছে। 

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণ। বনবিভাগসহ প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারনে সুন্দরবনে প্রচুর পরিমাণে হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।কথিত আছে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ৬ বার  রূপ পাল্টানো সুন্দরবন । বন মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙ্গছে বনের পর্যটক, কর্মকর্তাসহ বনরক্ষীদের। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কিচির-মিচির শব্দ করে গাছের এ ডাল থেকে ওডালে উড়ে ফিরছে। দেশি বিদেশি সৌন্দর্য পিপাসুদের কাছেটানে এ সুন্দরবন।মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন  আরো জানান চলতি অর্থ বছরে ১ লাখ ২০ হাজার  দেশি বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে সুন্দরবনে। এতে রাজস্ব আয়  হয়েছে
১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু চালু হলে যা দ্বিগুন হবে বলে আশা করেন তিনি।

বন বিভাগের তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দেশের বাগেরহাট,খুলনা ও সাতক্ষিরা জেলায় অবস্থিত পৃথীবির একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন হচ্ছে ৬ লাখ ১ হাজার ৭০০হেক্টর । যা দেশের আয়তনের ৪ দশমিক ১৩ ভাগ। সংরক্ষিত এ বনের ৩টি অভ্যায়ারন্যের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর বনাঞ্চলকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমিও। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এ জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। 

সুন্দরবনে ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খালে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টার,কুমরি ইত্যাদি। সুন্দরবনের স্থল ভাগে সুন্দরী, গেওয়া,গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। এছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, লোনা পানির কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। যা সৌন্দর্য পিপাসুদের হাতছানি দেয়।

মন্তব্য করুন: