শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, বৈশাখ ২৬ ১৪৩২, ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

আইভীর বাড়িতে পুলিশ, অনুসারীদের জটলা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী ধাপের আলোচনার কর্মপরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই: মির্জা ফখরুল তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান? ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এরপর কী? পাকিস্তান ভারত সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়: ক্ষেপণাস্ত্র, হামলা ও তথ্যযুদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে: আসিফ মাহমুদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে নেতৃত্ব পরিবর্তন: স্নিগ্ধর পদত্যাগ আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকার সংবাদপত্রের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চায় : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট ২০২৫: টেকনোলজির ঝড় উঠছে! ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী প্রভাব, করণীয় কী রক্তের প্রতিটি ফোঁটার বদলা নেব: শেহবাজ শরিফ

আন্তর্জাতিক

তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান?

 প্রকাশিত: ০২:১৮, ৯ মে ২০২৫

তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান?

উদ্বিগ্ন বিশ্বের সামনে চললো প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রতিযোগিতা। তাতে পাল্টাপাল্টি সাফল্যের দাবি থাকল, থাকল অভিযোগ। যে বয়ান দুই পক্ষ দিল, তার অনেক কিছুই পরস্পরের সঙ্গে মিললো না।

৭ মে প্রথম প্রহরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের হামলা পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশকে এক সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেল। ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে আরেকটি যুদ্ধ—তথ্যযুদ্ধ।

এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে সেসব তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই করার চেষ্টা করেছে আল জাজিরা।

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুই দেশের সরকার দাবি এবং পাল্টা দাবির নিজস্ব বয়ান নিয়ে সামনে আসে, যা সোশাল মিডিয়ায় আরও ছড়িয়ে পড়ে। তথ্যের এই বিস্তারকে নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করেছে দুই পক্ষই।

যেমন পাকিস্তান বলছে, পাঁচটি ভারতীয় জঙ্গিবিমান তারা ভূপাতিত করেছে। ভারত এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় কর্মকর্তারা আল জাজিরাকে বলেছেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তিনটি জেট ভূপাতিত হয়েছে, তবে সেগুলো ভারতীয় না পাকিস্তানি, তা নিশ্চিত করেননি তারা।

দুই দেশ এ পর্যন্ত কী কী পরস্পরবিরোধী দাবি করেছে, অতীতে তারা কীভাবে নিজেদের জনগণের কাছে বিজয়ের গল্প বলে এসেছে, এবং সেসব তথ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করার কাজটি কীভাবে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে, তা দেখানো হয়েছে আল জাজিরার প্রতিবেদনে।

 

পাকিস্তানে হামলা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিফিং। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানে হামলা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিফিং। ছবি: রয়টার্স

হামলার নিশানা কী ছিল?

ভারত বলছে, গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার জবাবে তারা নয়টি স্থানে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পেহেলগামের হামলায় ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করা হয়; আর সেজন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত।

ইসলামাবাদ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং দাবি করে, ভারতের উচিত ওই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দেওয়া।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ছয়টি শহর এবং একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। তাতে ৩১ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশুও আছে।

অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেছেন, তারা বেসামরিক মানুষের কোনো ক্ষতি করেননি।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই হামলা চালানো হয়েছে ‘নির্ভুল নিশানায়’ এবং লক্ষ্যবস্তুর বাইরে অন্যকিছুর ক্ষতি হয়নি।

ভারতীয় সেনারা কি নিয়ন্ত্রণ রেখায় সাদা পতাকা তুলেছে?

পাকিস্তান সরকার তাদের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে বলেছে, ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর একটি সামরিক পোস্টে সাদা পতাকা তুলেছে, যা সাধারণত আত্মসমর্পণের প্রতীক।

পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার একই দাবি করেছেন তার এক্স অ্যাকাউন্টে। তিনি লেখেন, “প্রথমে তারা তদন্ত এড়াল, এখন মাঠ থেকেও পালাল।”

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনও এই দাবির আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। তবে ভারত ও পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে লিপ্ত নয়, সেক্ষেত্রে আত্মসমর্পণের প্রয়োজন কেন পড়তে পারে, তা স্পষ্ট নয়।

 

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস হয়েছে মুজাফ্ফরাবাদের একটি মসজিদ। 

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস হয়েছে মুজাফ্ফরাবাদের একটি মসজিদ। 

জঙ্গি বিমান ভূপাতিত হয়েছে? কয়টি? কার?

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধুরী দাবি করেছেন, তাদের বাহিনী পাঁচটি ভারতীয় জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেছে, সবগুলো ভারতীয় ভূখণ্ডে। কোনো দেশই একে অপরের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি।

ভারতের নিরাপত্তা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে আল জাজিরা লিখেছে, তিনটি যুদ্ধবিমান ভারত-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভূপাতিত হয়েছে। তবে সেগুলো ভারতীয়, না পাকিস্তানি– সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদিও এখনো কিছু বলেনি, চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারতীয় জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্যকে ‘ভুল তথ্য’ বা ‘ডিসইনফরমেশন’ বলে দাবি করেছে চীনে ভারতীয় দূতাবাস।

পাল্টাপাল্টি দাবির পুরনো ইতিহাস

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের আগের ঘটনাগুলোও এরকম পাল্টাপাল্টি দাবি ও অভিযোগে ভরপুর, এর কোনটি সত্য—তা বোঝা কঠিন।

২০১৯ সালে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় আধা-সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হন। পরে ভারতীয় বাহিনী দাবি করে, এর প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বালাকোটে ‘জেইএম সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক, শীর্ষ নেতা ও জিহাদিদের’ বড় একটি অংশকে তারা ধ্বংস করেছে।

 

কোথায় কোথায় হামলা হয়েছে, প্রেস ব্রিফিংয়ে দেখিয়েছে ভারত। ছবি: রয়টার্স

কোথায় কোথায় হামলা হয়েছে, প্রেস ব্রিফিংয়ে দেখিয়েছে ভারত। ছবি: রয়টার্স

২০০০ সালে গঠিত জেইএম ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বহু হামলার সঙ্গে জড়িত। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অভিযোগ রয়েছে, জেইএম নেতা মাসউদ আজহার এখনও পাকিস্তানে সক্রিয়, কবে তার অবস্থান অজানা।

পাকিস্তান পুলওয়ামা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিল, ভারতীয় বিমান হামলায় শুধু একটি নির্জন বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একইভাবে ২০১৬ সালে উরি সেনা ঘাঁটিতে হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালানোর দাবি করলেও পাকিস্তান তা নাকচ করে বলেছিল, এটা ভারতের ‘কল্পনা’, আসলে সীমান্তে গুলি বিনিময় ছাড়া ‘কিছুই হয়নি’।

ওয়াশিংটন ডিসির ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক মাদিহা আফজাল বলেন, ভারত-পাকিস্তানের ৭৭ বছরের সংঘাতের ইতিহাসে নিজস্ব বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দুই পক্ষের জন্য মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে এখন সোশাল মিডিয়ার যুগে নিজের মত করে একটি বয়ান প্রচার করে তাকে প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন আফজাল।

তিনি বলেন, “তারপরও যেহেতু উভয় দেশের স্থানীয় গণমাধ্যম সাধারণত রাষ্ট্রীয় বর্ণনাকেই অনুসরণ করে, সেহেতু রাষ্ট্র নিজেদের পক্ষে জনমত গঠন ও সমর্থন আদায়ে সহজেই তা ব্যবহার করতে পারে।”