শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৭ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার তথ্য চায়নি

 আপডেট: ১৮:০১, ১০ আগস্ট ২০২২

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার তথ্য চায়নি

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার এখন পর্যন্ত সুইস ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি। এই কথা জানালেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড।

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিকাব টক নামক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাতালি এই কথা বলেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি বলেন, ‘‘সুইস ব্যাংকের যে সব ত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড সরকার। সুইস ব্যাংক আন্তর্জাতিক সব প্রক্রিয়া মেনেই কাজ করে থাকে। সেখানে কালো টাকা বা দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ রাখার কোনো নিয়ম নেই।’’

এ প্রসঙ্গে নাতালি আরও বলেন, ‘‘সুইস সরকার অবৈধভাবে উপার্জিত কোনও অর্থকে উৎসাহিত করে না। সুইস ব্যাংক বিশ্বের একটি অন্যতম ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এটা আমাদের জিডিপির অন্যতম একটি অংশ। তার মানে আমাদের জন্য এটি
খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সুইস ব্যাংক প্রতি বছর বাংলাদেশিদের টাকার তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় ব্যক্তিগত টাকা সংরক্ষণ হার মোটও বাড়ছে না, বরং তা কমছে।’’

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) হল সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যেটি দেশের মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং ব্যাংকনোট সুইস ফ্র্যাঙ্ক ইস্যু ও প্রচলন করে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বিশেষ ফেডারেল আইনের অধীনে গঠিত শেয়ার মালিকানার দ্বারা সীমাবদ্ধ একটি ব্যাংক কোম্পানি। এর দুটি প্রধান কার্যালয় রয়েছে, যার একটি বার্নে এবং একটি জুরিখে অবস্থিত।

গ্রাহকের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর সুনাম রয়েছে। কর ফাঁকি দেয়া, কিংবা দুর্নীতি বা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাখার জন্য 'ট্যাক্স হ্যাভেন' হিসেবে সুইস ব্যাংকগুলো দুর্নামও রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক এই বিষয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয় না বলে কঠোর সমালোচিত এই ব্যাংক। যদিও আইনের বাধ্যবাধকতা এবং দেশের কঠোর ব্যাংকিং নিরাপত্তার নীতিমালার কারনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়েও এই ব্যাংকের তেমন কিছুই করার নেই বলে জানা যায়। বিশ্বের অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা নামকরা তারকা সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ পাচার করে আসছেন। 

সুইস ব্যাংকগুলোতে এই ধারা শুরু হয় মূলত ১৯৩০ এর দশকে, যখন জার্মানির ইহুদীরা নাৎসীদের শুদ্ধি অভিযানের মুখে পড়ে, তখন তাদের অর্থ গোপন ব্যাংক একাউন্টে রাখার জন্য সুইস ব্যাংকগুলোকে বেছে নেয়। এতে করে ব্যাংকগুলো একধরণের ব্যবসাইক সুবিধা হাসিল করে। পরবর্তীতে, ফ্রান্সের কয়েকজন রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী তাদের বিপুল অর্থ সুইস ব্যাংকে রেখেছিলেন। সেই তথ্য ব্যাংক থেকে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। এরপর ১৯৩৪ সালে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই গোপনীয়তা আইনের সুযোগে সুইটজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো অবৈধ অর্থ রাখার বিশেষ জায়গা বা 'ট্যাক্স হ্যাভেন'-এ পরিণত হয়েছে। ফলে তৃতীয় বিশ্বের দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে ইউরোপ-আমেরিকার কর ফাঁকি দেয়া বিত্তশালী ব্যবসায়ী, সবাই তাদের অর্থ গোপন রাখার জন্য বেছে নেন সুইস ব্যাংকগুলোকে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুইটজারল্যান্ডের ওপর চাপ বেড়েছে এরকম অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। ফলে নাম পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন দেশের ধনীরা সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন। ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ায় বার্ষিক ভিত্তিতে জমা টাকার হিসাব প্রকাশ করে সুইজ ন্যাশনাল ব্যাংক। ২০২২ সালের ১৬ জুন এই ব্যাংক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দেশটিতে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ২০২১ সালের শেষে বিদেশিদের আমানতের পরিমাণ প্রকাশিত হয়, যা নিম্নরূপ :

বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ ( ৮৩৩১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, প্রতি সুইস ফ্রাঁ ৯৫.৬৫ টাকা হিসাবে)।
ভারতীয়দের জমানো অর্থের ৩৮২ কোটি ৮৯ লাখ ফ্রাঁ।
মার্কিন নাগরিকদের জমানো অর্থের পরিমাণ ১৬৭৩৩ কোটি ফ্রাঁ।
রাশিয়ার নাগরিকদের জমানো অর্থের পরিমাণ ২১৩৭ কোটি ফ্রাঁ।
শ্রীলঙ্কার জমানো অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ৬০ লাখ ফ্রাঁ।[২৩]

বিশ্বের মধ্যে সুইস ব্যাংকগুলোতে ৩৭৯ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ জমা রেখে তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এরপরই ১৬৮ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ জমা রেখে দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। তালিকার শীর্ষ ১০ এ থাকা অন্য দেশগুলো হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জার্মানি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, হংকং, লুক্সেমবার্গ, বাহামাস, নেদারল্যান্ডস ও কেম্যান।

মন্তব্য করুন: