ফাঁস হওয়া ফোনালাপে ঝড়, ক্ষমা চাইলেন থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন

Paetongtarn Shinawatra, Prime Minister of Thailand
কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ব্যাপক জনচাপ ও রাজনৈতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে তিনি জাতির উদ্দেশে দুঃখপ্রকাশ করেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে রাজনৈতিক সংকট কাটবে কি না, তা অনিশ্চিত।
ফাঁস হওয়া অডিওতে পেতংতার্নকে সাবেক কম্বোডিয়ান নেতা হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায়। সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক সেনা কমান্ডারকে তিনি নিজের ‘প্রতিপক্ষ’ বলেও উল্লেখ করেন।
এই মন্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিরোধীরা দাবি তোলে, একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমন মন্তব্য অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য।
ফোনালাপ ফাঁসের পরপরই ক্ষমতাসীন জোটে বড়সড় ধাক্কা লাগে। প্রধান শরিক দল ভুমজাইথাই পার্টি বুধবার জোট ত্যাগ করে। দলটির দাবি, পেতংতার্নের বক্তব্যে দেশের সম্মান ও সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
৬৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন হারানোয় সরকারের পক্ষে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে আবারও আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে—যদিও মাত্র দুই বছর আগেই (২০২৩ সালের মে মাসে) নির্বাচন হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধান ও নিজ দল পেউ থাই পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পেতংতার্ন বলেন,
"কম্বোডিয়ার এক নেতার সঙ্গে আমার কথোপকথনের অডিও ফাঁস জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং এই ঘটনার দায় নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঐক্য বজায় রাখতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে তিনি সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
বাকি দুই শরিক দল—ইউনাইটেড থাই নেশন ও ডেমোক্র্যাট পার্টি—এখন নিজেদের অবস্থান পর্যালোচনা করছে। তাদের যে কোনো একটি দল জোট ছাড়লেই পেতংতার্ন সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সরকার টিকিয়ে রাখতে হলে পেতংতার্নকে শুধু রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযানে নেমেই নয়, নতুন করে জোট গঠন বা সমঝোতার পথও খুঁজতে হবে।
এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন এমন এক সময় শুরু হলো, যখন থাইল্যান্ড ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে চায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্কের চাপ এড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সেক্ষেত্রে এই সংকট দেশটির আন্তর্জাতিক অবস্থান ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।