রংপুর শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিখোঁজ ও নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড়

সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র
রংপুরের দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকায় অবস্থিত সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চার কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জেলাজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই কিশোরীকে পুলিশ উদ্ধার করলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছে বাকি দুইজন। উদ্ধার হওয়া কিশোরীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছে।
উদ্ধার হওয়া কিশোরী স্মৃতি (১৭) অভিযোগ করে বলেন, "পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রতি রোববার একজন পুরুষ আসে, সে আমাদের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। এক কিশোরী গর্ভবতী হয়েছিল—তাকে এখন আর কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে না।"
তিনি আরও জানান, আদালত তাদের সুরক্ষায় এখানে পাঠালেও বাস্তবে কেন্দ্রটি ছিল ভয়াবহ নির্যাতনের স্থান। নির্যাতনের প্রতিবাদ করলেই গালাগাল ও হুমকি দেওয়া হতো।
স্মৃতির মা মুক্তি বেগম বলেন, "মেয়ের ওপর নির্যাতনের কথা বলতেই সমাজসেবা কর্মকর্তারা থানায় জিডি করতেও বাধা দেয়।" পরে তিনি নিজেই সাধারণ ডায়েরি করেন।
রংপুর মানবাধিকার ও পরিবেশ সংগঠনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এএএম মুনীর চৌধুরী বলেন, “রাষ্ট্র যে শিশুদের রক্ষা করার কথা বলছে, সেই প্রতিষ্ঠানেই যদি নির্যাতনের অভিযোগ উঠে, আর তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়, তবে তা গভীর উদ্বেগের বিষয়।”
সাংবাদিকদের সরেজমিনে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। পরে চাপ প্রয়োগে গেট খোলা হলে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রথমে ঘটনা অস্বীকার করলেও পরে কিশোরীদের পালানোর বিষয়টি স্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, "২০২৫ সালে এই কেন্দ্রেই ৪ শিশু মারা যায়। তাদের মধ্যে একজনের ময়নাতদন্ত হলেও বাকিদের তা ছাড়াই দাফন করা হয়।"
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র বর্মণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান, যা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ করে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন, স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ এবং সাংবাদিকরা দ্রুত স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ঘটনাটি বর্তমানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নজরে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।