গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে মৃত্যু, ইসরায়েলি হামলায় নিহত বেড়ে ৮৪

অশ্রুসিক্ত দুই ফিলিস্তিনি। ছবি: রয়টার্স
গাজায় একের পর এক ইসরায়েলি হামলায় মৃত্যু যেন এখন আর খবর নয়, বরং নিত্যদিনের বাস্তবতা। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ভোর থেকে দিনভর চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৪ জন ফিলিস্তিনি। নিহতদের অনেকে ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে, কেউ বা নিজের ঘরে পরিবার নিয়ে আশ্রয়ে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, শুধুমাত্র গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৯ জন। সালাহউদ্দিন সড়কের নেৎজারিম করিডোরে ত্রাণ সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে চালানো হয় গোলাবর্ষণ।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ গাজার জাইতুন এলাকায় এক বাড়িতে চালানো বিমান হামলায় মারা যান ৮ জন। অন্যদিকে আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু লক্ষ্য করে চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন নারী ও শিশুরাও।
মধ্য গাজার মাঘাজি শিবিরে একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানের প্রাণহানিসহ নিহত হয়েছেন ১০ জন—বলা হয়েছে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা’র প্রতিবেদনে।
এই ঘটনার এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেন গাজার বাসিন্দা আহমেদ ঘাবেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, “আমার ভাগ্নে তার সন্তানদের জন্য আটার ব্যাগ আনতে গিয়েছিল। এখন সে কেবল এক নিথর দেহ হয়ে ফিরে এসেছে। সে কোনো যোদ্ধা ছিল না, কেবল ক্ষুধার তাড়নায় গিয়েছিল।”
গাজায় অবস্থানরত আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সরাসরি খাদ্য সহায়তা নিতে আসা সাধারণ মানুষদেরই টার্গেট করছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি জানান, হামলা চালানো হয়েছে ড্রোন, ট্যাংক এবং পাহাড়ে বসানো স্নাইপার দিয়েও।
এর আগের দিন, বুধবার প্রকাশিত আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা উত্তরে ২০ জন নিহত ফিলিস্তিনির মরদেহ রাস্তার পাশে পাঁচ দিন ধরে পড়ে ছিল। ইসরায়েল জাতিসংঘকে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি না দেওয়ায় মরদেহগুলো অন放স্থিত ছিল। পরে জাতিসংঘের সমন্বয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হয়।
হামাস এ হামলাকে ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, “ক্ষুধার্তদের টার্গেট করা, বাস্তুচ্যুতি, তথাকথিত নিরাপদ এলাকার নাটক—সব মিলিয়ে এটি যুদ্ধাপরাধ। এটি প্রায় ২০ মাস ধরে চলা এক গণবিনাশী যুদ্ধেরই অংশ।”
ঘটনার পেছনে রয়েছে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। গত মে মাসের শেষ দিকে ইসরায়েল খাদ্য সহায়তা পরিবহনে আংশিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর এই সংস্থার মাধ্যমে সীমিত আকারে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ—এই সংস্থা ইসরায়েলি সামরিক স্বার্থকে মানবিক চাহিদার ওপরে স্থান দিচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৬৩৭ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৮০ জন।