মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, আষাঢ় ১৭ ১৪৩২, ০৫ মুহররম ১৪৪৭

ব্রেকিং

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সংঘাত বিস্তার: বিশ্লেষণ কলম্বিয়ায় পাহাড়ধসে মৃত্যু ১৬, নিখোঁজ অন্তত ৮ “ত্রাণ নিতে এলে গুলি করতাম”—গাজার ঘটনায় মুখ খুললেন ইসরায়েলি সেনারা তেহরানে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার চলছেই, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৫০ ইরানে বাংলাদেশিদের সহায়তায় হটলাইন চালু উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ: সিলেটে তিনজন কারাগারে ইসরায়েলের টার্গেটে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবন লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ১৩ জুন তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: ফখরুল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ঘর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষিত সময় মাথায় রেখে যথাসময়ে রোডম্যাপ দেবে ইসি: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দিন মণিপুরে আবার উত্তেজনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চাপে ঢাকার ৪ থানায় সক্রিয় অর্ধশতাধিক অপরাধী দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি ২৫ কিলোমিটার যানজট, ২৪ ঘণ্টায় পারাপার ৬৪ হাজার যানবাহন বান্দরবানের রুমা ও থানচি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, জাতিসংঘ নিরাপত্তা গরম মসলার বাজার শীতল: ক্রেতা কমে যাচ্ছে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল ঈদে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দই-মিষ্টি মজুত, রংপুরে হিমাগারে অভিযান ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রতি অসত্য অভিযোগ ও বাস্তবতা ভারতের মুসলমানদের কেন বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিলোপ সম্ভব নয়: এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক একুশের বন্ধুত্বে আগামীর পথচলা: বার্ষিক সম্মেলনে ২১তম বিসিএস প্রশাসন ফোরাম বিজিএমইএ`র নতুন নেতৃত্বে আসছেন বাবু, নিরঙ্কুশ জয়ের ইঙ্গিত জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির তাৎপর্য চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ঘটনায় ভাইরাল আকাশ চৌধুরী বহিষ্কৃত, জামায়াতের বিবৃতি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিল পবিস শ্রমিকরা আনচেলত্তির স্বপ্ন - রিয়াল মাদ্রিদের মতো করে খেলাবেন ব্রাজিলকে ডিমের দাম এখনো চড়া, ডজন ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি বৈরী আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হারের পর লিটনের মনোভাব - এখনো দুই ম্যাচ বাকি কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করবে ডিএনএ টেস্ট করে নামফলক ও মর্যাদা চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা বেতন না পেয়ে ডাকাতি, জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজন আটক “বাংলাদেশে কৌশলগত স্বার্থ নেই দক্ষিণ কোরিয়ার”—রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক “শাপলার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”—হেফাজতের বিবৃতি মির্জা আব্বাস: “করিডর আর স্টারলিংক আনা হচ্ছে আরাকান আর্মির জন্য” জিলহজ মাসের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন নির্বাচনের আগে যতটুকু দরকার, ততটুকুই সংস্কার করতে হবে: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘চিন্তার স্বাধীনতাও হারাচ্ছি?’— নারী কমিশন বিতর্কে গীতিআরার উদ্বেগ ইউক্রেনে রাশিয়ার টানা হামলায় নিহত ১২, কঠোর চাপের আহ্বান জানালেন জেলেনস্কি সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন – তিনটি কঠিন দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আমরা জুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদল নয়, এটি মৌলিক সংস্কার: নাহিদ হলুদ সাংবাদিকতা’ বিরোধী স্লোগানে উত্তাল শিক্ষক মিছিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪০% বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলছে, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জাতীয় স্বার্থে অভিমান ভুলে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : জামায়াত আমির আন্দোলনের পর অবশেষে নিয়োগ পেলেন ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া ১৬২ জন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে ইসির সামনে এনসিপির বিক্ষোভ কাল বাংলাদেশে স্টারলিংকের যাত্রা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগ শুরু নরওয়ের দৃঢ় সমর্থন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিগত সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এমন অবস্থা ছিল যে খতিবকেও পালাতে হয়েছিল: বাণিজ্য উপদেষ্টা গায়ের জোরে নগর ভবন দখল করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি আবারও রাজপথে নামার ইঙ্গিত আসিফের, সতর্ক করলেন হাসনাত গোপন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন স্থগিত, ২০ মে আলোচনায় বসবে ঐক্য পরিষদ ভারতের আমদানি নিষেধাজ্ঞা সীমান্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ গত ৯ মাসে জুলাই-যোদ্ধাদের ওপর ৩৮টি হামলা জবি’র ৪ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা ডিবি থেকে মুক্তির পর আন্দোলনে উল্লাস জবি শিক্ষার্থীর গাজা দখলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার উপদেষ্টা আসিফের সোনার দাম ভরিতে কমল ৩ হাজার ৪৫২ টাকা, নতুন দর কার্যকর শুক্রবার থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ প্রশাসনের আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

ইসলাম

মুসকান: হিজাব ও তাকবীর ধ্বনি

মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ

 প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৭ মার্চ ২০২২

মুসকান: হিজাব ও তাকবীর ধ্বনি

ঘটনা ভারতের কর্ণাটকের। একটি কলেজের ফটকে দাঁড়িয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান দিচ্ছে আর হিজাব-বোরকা পরা ছাত্রীদের কলেজে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে একদল তরুণ। তাদের গলায় ঝুলানো লাল গেরুয়া কাপড়ের টুকরা। এ সময়ই হিজাব পরা এক তরুণী স্কুটিতে চড়ে ওই কলেজে ঢুকল এবং শান্ত ভঙ্গিতে স্কুটিটিকে নির্ধারিত জায়গায় রেখে তার শ্রেণিকক্ষের দিকে যেতে লাগল। এরই মধ্যে গেরুয়া বসনধারী লাঠিধারী তরুণেরা ‘জয়শ্রীরাম’ শ্লোগান দিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল এবং হিজাব নিয়ে কটূক্তি করতে শুরু করল।

সেখানে তখন ওই কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদেরও কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন। তাদের কেউ তখন উগ্র হিন্দুত্ববাদী তরুণদের বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি এবং বিব্রতকর ও ভীতিকর পরিবেশ থেকে মেয়েটিকে বাঁচাতে চেষ্টা করেনি। তখন মেয়েটি ‘জয়শ্রীরাম’ ধ্বনিদাতাদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে একটি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি উচ্চারণ করল। এরপর মেয়েটি তার পথ ধরে হেঁটে যেতে লাগল এবং আরো কয়েকবার তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করল। হিন্দুত্ববাদী মারমুখি তরুণদের বিরুদ্ধে সেখানে মেয়েটি ছিল একা এবং নিঃশঙ্ক প্রতিবাদী ভঙ্গিতে সে এগিয়ে যাচ্ছিল।

ঘটনা এই ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখের। এই ঘটনার ভিডিও প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভারত আর উপমহাদেশ শুধু নয়, গোটা পৃথিবীতে সাড়া পড়ে যায়। এর পরপর গণমাধ্যমের শিরোনামে এবং সাক্ষাৎকার-প্রতিবেদনে সামনে চলে এল প্রতিবাদী মুসলিম তরুণীটি। হিজাব পরিহিত ও তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণে নজির স্থাপনকারী মুসকান খান প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হল।

। দুই।

এই ঘটনা সামনে আসার পর একে একে ভারতে এ-জাতীয় পরিস্থিতির আরও অমানবিক বিভিন্ন খবর, ছবি-ভিডিও সামনে আসতে থাকে। তরুণী মুসকানের সাহসিকতার জন্য মুসলমানদের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারতজুড়ে তাকে অভিনন্দন জানানোর স্বতস্ফূর্ত আবেগের ঘটনা যেমন প্রকাশ্যে আসে, তেমনি হিজাব খুলতে বাধ্য হওয়া মুসলিম মেয়েদের কান্নার আওয়াজও ভেসে আসে। স্বয়ং মুসকান-ই জানায়, তার এই প্রতিবাদের ঘটনাটির আগে হিজাব খুলতে বলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে বহু মুসলিম তরুণী শিক্ষার্থী কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেছে। হিন্দুত্ববাদীরাও ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে। প্রকাশ্যে লাঠিসোঠা নিয়ে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে হিজাবের বিরুদ্ধে ‘নিয়ম ও আইন কানুনে’র পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এর একটি ফল ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেখা গেছে। এখন কর্ণাটকসহ কোনো কোনো জায়গায় ‘আইনিভাবে’ বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে হিজাব পরিহিত মুসলিম তরুণীদের। বাধার মুখে কিছু মেয়ে কলেজের গেটে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত হিজাব খুলে প্রবেশের পথ বেছে নিয়েছে। কোনো কোনো হিজাব পরিহিত তরুণীকে তার মা-বাবা স্কুল থেকে আবার ফিরিয়েও নিয়ে গেছেন। তারা বলেছেন, আমাদের মেয়েদের শিক্ষা দরকার; কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি দরকার তাদের পর্দা।

এ পরিস্থিতিতে ভারতের মুসলিম রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ভাষায় তাদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করছেন। বিদ্যালয়ে হিজাব পরতে দেওয়ার পক্ষে দাবি জানাচ্ছেন। আন্তর্জাতিকভাবে ওআইসি এবং দু-একটি মুসলিম রাষ্ট্র কিছু কিছু প্রতিবাদের ভাষা উচ্চারণ করেছে। তবে এসবের মধ্যেও ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও সামরিক যোগ ও সম্পর্ক বৃদ্ধির বৈঠক করে খবরে এসেছে প্রভাবশালী আরব-মুসলিম রাষ্ট্রের কিছু নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তা। এ যেন মুসলমান মা-বোনদের সম্ভ্রমের চাদর ছিঁড়ে ফেলা উগ্র গোষ্ঠীর সঙ্গে স্বার্থের নির্বিকার যোগাযোগ। এ যেন মুসলিম নারীর শরীর থেকে হিজাব খোলার নামে গায়ের চামড়া খুলে নেওয়ার মতো পাশবিক হাতগুলোর সঙ্গে মিতালির সুবিধা-বন্ধন।

। তিন।

গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতে মুসলমানদের জীবন ও ধর্মপালন দিন দিন দুর্বিষহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এবং তার উগ্র হিন্দু মিত্রদের হাতে ভারতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর থেকে মুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব নিয়ে ঝামেলা তৈরি করাসহ নানামাত্রিক অধিকার ও নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে মুসলমানদের দূরে সরানোর কাজগুলো ধাপে ধাপে ও প্রকাশ্যে চলেছে। ‘গো-মাংসের’ ভুয়া অভিযোগ তুলে বহু মুসলিমকে পথেঘাটে ও বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে। বহু মসজিদ ও মুসলিম স্থাপত্য ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বহু জেলা-নদী-স্টেশনের ‘মুসলিম নাম’ বদলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ও চাকরি থেকে প্রকাশ্য-কৌশলে মুসলমানদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। গত কয়েক মাস যাবৎ শোনা যাচ্ছিল, বিভিন্ন প্রদেশে খোলা মাঠে মুসলমানদের নামায আদায়ে বাধা দেওয়া হয়েছে। মারধর ও বাধাদানের খবর-ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়েও পড়েছে। আর মাসখানেক ধরে মুসলিম নারীদের বিদ্যালয়ে-শিক্ষাঙ্গনে হিজাব পরতে মানা করা হচ্ছে। হিজাব খুলে বিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ এক ভয়াবহ ধারাবাহিকতা। দেশটিতে দিন দিন রাজনৈতিক-নাগরিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াদির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ চলতে চলতে নিরেট ধর্মীয় বিষয়েও হস্তক্ষেপ ও অধিকার-বঞ্চনার এক জঘন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

। চার।

মুসকানের তাকবীর ও প্রতিবাদের পর যে আট-দশদিন সময় অতিক্রম করেছে, এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। হিন্দুত্ববাদের বীভৎস চর্চা দেশটিতে এমন এক পর্যায়ে গিয়েছে যে, মুসলিম ও ইসলামের প্রতি উগ্র বিদ্বেষের ক্ষেত্রে তৃণমূলের গেরুয়া বসনধারী থেকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা, বুদ্ধিজীবী ও আদালত একই সুরে কথা বলছে। মুসকানের তাকবীর পরবর্তী হিজাব খুলতে বলার ঘটনাগুলোর পেছনে মূলত ভারতীয় আদালতের ‘হিন্দুত্ববাদী’ দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্তকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তের জোরেই স্কুল-কলেজের প্রধান ফটক পর্যন্ত হিজাব পরে চলে আসা তরুণীদের হিজাব খুলে ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মুসলিম তরুণী শিক্ষার্থীদের হিজাব খুলে ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধ্য করার কাজটি করছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীরাই। এমনকি একটি ভিডিও ক্লিপে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যও দেখা গেছে যে, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশের লবিতে বাধ্য হয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী তরুণীরা নিজেদের শরীর থেকে হিজাব খুলছে আর তাদের ‘হিজাবখোলা জীবন ও অস্তিত্বের’ দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে ওই বিদ্যালয়ের পুরুষ শিক্ষক/কর্মকর্তা।

এখন পরিস্থিতি এমন একটি জায়গায় চলে গেছে যে, মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত মুসলিম পরিবারগুলো তাদের মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণের পর্যায় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে অথবা মুসলিম মেয়েদের জন্য হিজাব-বোরকার ব্যবস্থাপনাসহ নতুন ধরনের বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করবে। এমন ভাবনা-চিন্তার কথা গণমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। তবে এটা তো মিথ্যা নয় যে, এ-জাতীয় ধমীর্য় সাংস্কৃতিক আঘাতের সময় বিভিন্ন দিকে অনেক ‘আত্মসমর্পণ ও আত্মপরিচিতি বিলোপে’র মতো ঘটনা ঘটে যায়। মুসলিম জাতিসত্তা, পরিচিতি-বিধি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বড় রকম বিপর্যয়ের ধারা কিছু না কিছু শুরু হয়ে যায়। কারণ, সঙ্কটের সময় সবাই তো আর দৃঢ়তার সঙ্গে গ্রহণ-বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আন্দালুস হারানোর ইতিহাসের শেষ পর্বে মুসলমানদের যেমন পরিচয়শূন্য হতে বাধ্য করা হয়েছিল, দিন দিন পরিচয়হীন ‘মরিসকো-মুসলিম’ নামের একটি শ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল, কিংবা ‘ইরতিদাদে’র চাপে ও ঝড়ে হারিয়ে গিয়েছিল বহু মুসলমান! অনেকেই মনে করছেন, বর্তমান ভারতে সেই দুঃসময়ের একটি বহুমুখি পদধ্বনি শুরু হয়ে গেছে।

আল্লাহ তাআলা দয়া করুন, দেশটিতে পরিস্থিতির অদল-বদল মুসলমানদের অস্তিত্বের জন্য এখন খুব জরুরি।

। পাঁচ।

হিজাব বিরোধিতায় ভারতের এই সর্বগ্রাসী হিন্দুত্ববাদের বর্তমান চিত্র দেখে অনেকেই এ উপলব্ধি নতুন করে অনুভব করছেন, বিশালায়তন এ দেশটির হিন্দুত্ববাদী ‘সাম্প্রদায়িক’ সত্তাটি আসলেই অনেক কঠোর ও শক্ত। এ যেমন আজকের বাস্তবতা, তেমনি গত পঁচাত্তর বছরে এ বাস্তবতার নজির বারবার সামনে এসেছে। হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া বসনধারীরা সর্বভারতীয় ক্ষমতার বাগডোর হাতে নিয়েছে মাত্র এক যুগের গল্প, কিন্তু ’৪৭ পূর্বকাল থেকেই হিন্দুত্ববাদী আঘাত-আক্রমণ, খোঁচাখঁুচি-ষড়যন্ত্র থেকে কখনো মুসলমানরা নিরাপদ থাকতে পারেনি। উপমহাদেশজুড়ে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য হিন্দুত্ববাদী ‘অভিযান’ সবসময় সক্রিয় ছিল। ভারতভূমি মাত্রই হিন্দুদের, হিন্দু ধর্মের, হিন্দু সংস্কৃতির, হিন্দুত্ববাদের- এ বিশ্বাস ও ডকট্রিন পুরনো এবং প্রোথিত। ’৪৭ পূর্ব হিন্দু নেতাদের কেউ সেটা প্রকাশ্যে এনেছেন, কেউ অপ্রকাশ্যে চর্চা করেছেন। ভারত নিয়ন্ত্রক বিজেপি-কংগ্রেস ও বামসমগ্রের কেউ এ চিন্তাভঙ্গি থেকে খুব একটা দূরত্বে নেই। এজন্যই মুসলিম তরুণীদের হিজাব খোলা, এনআরসি, সিএএ কিংবা কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা বাতিল- এসব ইস্যুতে তারা বেশি একটা আলাদা হতে চান না- হতে পারেন না।

এমনকি দেশটির রাজনৈতিক দলের সারিতে নেই- এমন সব গণমাধ্যম-সুশীল, চিন্তাকেন্দ্র, বিনোদন-সংস্কৃতি জগৎ- প্রায় সবাই এবং সবগুলো প্রধান ধারা এই হিন্দুত্ববাদী ‘সর্বগ্রাসী মুসলিম পীড়নের’ সঙ্গে একাকার। সঙ্গত কারণেই দেশটির পাকিস্তান-বাংলাদেশ নীতি বা দৃষ্টিভঙ্গির জায়গাটাও এই ‘হিন্দুত্ববাদী গ্রাস’-এর আওতাভুক্ত। ’৪৭ পূর্বকালে ভারত বিভাগ ও মুসলিম লীগ চিন্তার বিরোধী স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী এবং দীর্ঘকাল জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তাঁর ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রীডম’ বইয়ে কংগ্রেসের হিন্দু নেতাদেরকে ভারতভাগের জন্য দায়ী করেছেন। বল্লভ ভাই প্যাটেল সরাসরি, আর পরোক্ষভাবে নেহেরু নিজেও যে ভারতভাগের পক্ষে ছিলেন এবং এজাতীয় নেতাদের যে ন্যূনতম মুসলিম স্বার্থ রক্ষা করে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য বা সহাবস্থানের পক্ষে মতামত ছিল না- সেকথা তিনি ‘৩০ বছর পর উন্মোচিত ৩০ পৃষ্ঠায়’ তুলে ধরেছেন। আজকের ভারত ও ভারতবর্ষের নানা রকম সরকারি-বেসরকারি-আদালতি ‘মুসলিম বিদ্বেষ’-এর শেকড় খোঁজার সময় এই পেছন বাস্তবতাগুলো সামনে থাকলে সুবিধা হবে।

। ছয়।

কর্ণাটকের মুসকান বয়সে তরুণী হলেও তার প্রতিবাদ, তাকবীর, হিজাবের জন্য তার দৃঢ়তা ও আবেগ স্বভাবজাত মুসলিম নারীর আত্মমর্যাদাকেই সামনে তুলে ধরেছে। ভারতে চলমান ও ধারাবাহিক অস্তিত্বগত ও ধর্মীয় জুলুমের বিরুদ্ধে একটি শাণিত ও বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী শান্ত প্রতিবাদ হিসেবে পৃথিবীর দেশে দেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। একজন মুসলিম নারীর হিজাবের মাত্রা, তার পর্দার পূর্ণতা- ইত্যাদি বিষয়ে মুসকানের চলমানতা ও পোশাক নিয়ে প্রশ্ন ওঠানোর সুযোগ থাকলেও আমাদের মনে হয়েছে, এখানে ইস্যুটি মুসলিম নারীর মৌলিক হিজাব ও সম্ভ্রমের অস্তিত্বের এবং একইসঙ্গে ‘জয়শ্রীরামের’ সর্বগ্রাসী শিরকি ধ্বনির বীভৎসতার সামনে ‘আল্লাহু আকবার’-এর বলিষ্ঠ ও আত্মবিশ্বাসী অভিব্যক্তির। আধুনিক শিক্ষাধারার সঙ্গে যুক্ত মুসলিম তরুণী; এবং আরেকটু ব্যাপক পরিধিতে বললে শিরক ও তাগুতের বিপুল বিস্তৃত শয়তানী চিৎকারের সামনে তাওহীদ ও গায়রাতের এক দুনিয়া ভাসানো ‘আল্লাহু আকাবার’ ধ্বনি উচ্চারণ করে মুসকান তার দেশ ও সময়কালে সব শ্রেণির শিক্ষিত মুসলিম তরুণীদের পক্ষে একটি বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। মুসলিম নারীর এই গায়রত অনুসরণীয় ও মোবারকবাদ-যোগ্য। আমরা তার জন্য দুআ করি।

মুসকানের প্রতিবাদী ঘটনার প্রায় ১০ দিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটকের একটি কলেজে হিজাব পরিহিতা ইংরেজির এক শিক্ষিকাকে হিজাব খুলে কলেজে ঢুকতে বলা  হয়। ধর্মীয় প্রতীক বা পোশাক না পরে কলেজে ঢোকার ‘নতুন’ ‘আইনের’ কথা তাকে শোনানো হয়। ধমীর্য় ও জাতীগত আত্মমর্যাদার ওপর এই আঘাতটিকে সহজভাবে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তখন তিনি  চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন। মুসকানের প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদ-উত্তর হিজাববিরোধী হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন ও তাণ্ডবের এসব হচ্ছে নতুন চিত্র। ঈমান, দ্বীন, দ্বীনী সংস্কৃতি এবং অস্তিত্ব ও প্রতিবাদের এক নতুন পথচলায় ভারতীয় মুসলমানরা। এর সঙ্গে দুনিয়ার মুসলমানরাও। ভারতের প্রতিবেশী দেশ এবং ইসলাম এলার্জিক মুষ্টিমেয় উগ্র সেক্যুলারের জনপদের বাসিন্দা হিসেবে আমাদেরও দরকার সর্বাত্মক সতর্কতা, সাহস ও ঈমানদারি। আমাদের জন্যে এসবের কোনো বিকল্প নাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাজত করুন। হেফাজত করুন পৃথিবীর দেশে দেশে সব মুসলিম নর-নারীকে।