ইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস নিয়ে ট্রাম্প কি মিথ্যা বলেছেন?

ট্রাম্প বলেছিলেন ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’, কিন্তু আইএইএ বলছে – এখনো সক্ষম ইরান!
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারেনি। বরং তাঁর মতে, তেহরান চাইলে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হবে।
এই মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ট্রাম্প বলেছিলেন, সাম্প্রতিক হামলার ফলে ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষা ‘দশকের পর দশক পিছিয়ে গেছে’।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)–এর প্রাথমিক বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় কেন্দ্রীয় অবকাঠামোগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি। এতে দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে—সম্ভবত কয়েক মাসের জন্য—বাধাগ্রস্ত হয়েছে মাত্র।
তবে চূড়ান্ত সামরিক বা গোয়েন্দা মূল্যায়ন এখনো প্রকাশ হয়নি। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গেছে।
এদিকে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির-সাঈদ ইরাভানি গতকাল সিবিএসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম কখনোই বন্ধ হবে না। তাঁর ভাষায়, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ইরানের ‘অপরিহার্য অধিকার’।
উল্লেখ্য, জুনের শুরুতে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর শুরু হয় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত। তেল আবিব জানায়, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে বাধা দেওয়া। তবে ইরান শুরু থেকেই বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।
যুদ্ধবিরতির আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। তবে এসব হামলায় তেহরানের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা এখন হামলার পরিকল্পনা ও প্রভাব নিয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছেন। যদিও ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখনো উপস্থাপন করা হয়নি।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু গোপন বার্তা সংগ্রহ করেছে, যাতে ইরানিরা নিজেরাই স্বীকার করেছেন—হামলাগুলো প্রত্যাশার চেয়ে কম ধ্বংসাত্মক ছিল।
‘পুরোপুরি ধ্বংস নয়, কিন্তু গুরুতর ক্ষতি’
আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি সিবিএস আয়োজিত ‘ফেস দ্য নেশন উইথ মার্গারেট ব্রেনান’ অনুষ্ঠানে বলেন, “এ ধরনের বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের পরপরই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া কার্যকর কোনো কৌশল নয়। ইরানের সক্ষমতা এখনো অটুট আছে।”
তিনি আরও বলেন, “মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তারা আবার সেন্ট্রিফিউজ চালু করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে—হয়তো আরও আগেই। খোলাখুলি বললে, এটা বলা যাবে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।”
গ্রোসি শেষ পর্যন্ত যোগ করেন, “হ্যাঁ, গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি। ইরানের শিল্প ও প্রযুক্তিগত কাঠামো এখনো আছে, চাইলে তারা যেকোনো সময় কার্যক্রম আবার শুরু করতে পারবে।”