ইরানে হামলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল আগেই, গোপন বৈঠকে করা হয় ‘হত্যার তালিকা’

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত বছরই ইরান হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন বলে জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট।
ইসরায়েল গত বছরই ইরানে হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছিল বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক গোপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দেন। এ সময় ইসরায়েলি গোয়েন্দারা সম্ভাব্য হত্যার লক্ষ্য হিসেবে ইরানি বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতাদের তালিকাও তৈরি করেন।
সাবেক ও বর্তমান ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকেই ইসরায়েল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে থাকে এবং হিজবুল্লাহসহ মিত্রদের দুর্বল করার চেষ্টা করে। এরপর নেতানিয়াহু সরাসরি হামলার প্রস্তুতির নির্দেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা
ওয়াশিংটনের সমর্থন নিশ্চিত করাও ছিল ইসরায়েলের কৌশলগত প্রস্তুতির একটি অংশ। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ একক অভিযানের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হতো।
শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে এ সংঘাতে যুক্ত করেন। তাঁর নির্দেশে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।
হামলার সিদ্ধান্ত হয় আরও আগেই
ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, নেতানিয়াহু গত ৭ এপ্রিল ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগেই ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। সূত্র জানায়, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ইরান নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করলে ইসরায়েলের হামলার সুযোগ সীমিত হয়ে যেত। তাই সর্বোচ্চ জুনের মধ্যে হামলা চালানো জরুরি ছিল বলেই তারা মনে করছিল।
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় আকস্মিক হামলা চালায়, যখন ট্রাম্প কূটনৈতিক আলোচনায় ছিলেন।
গোপন গোয়েন্দা তথ্য ও বিতর্ক
২০২৪ সালের গ্রীষ্ম থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তথ্য বিনিময় করে। যদিও মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকেরা মনে করেননি, ইরান তখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মতবিরোধ ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যেও বিভাজনের জন্ম দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু ট্রাম্প এ মূল্যায়ন উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাঁর বিশ্বাস ইরান খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল।
হামলার যৌক্তিকতা ও বিতর্ক
নেতানিয়াহু দাবি করে আসছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং তাকে সামরিকভাবে ঠেকানোই একমাত্র উপায়। তবে আন্তর্জাতিক মহলে এই হামলার বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ইরান বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে এবং বিপজ্জনক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছে। তাই হামলা শুধু একটি ‘সুযোগ’ ছিল না, বরং এটি ছিল ‘প্রয়োজনীয়’ পদক্ষেপ।
‘অন্য কোনো বিকল্প ছিল না’
ইসরায়েলের একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “সত্যি বলতে, হামলার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতো না। আমাদের সেনাবাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল, আর ইরান ও তার মিত্ররা দুর্বল ছিল। এই মুহূর্তটাই ছিল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার উপযুক্ত সময়।”
নেতানিয়াহু নিজেও ইসরায়েলের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত তিনি কয়েক মাস আগেই নিয়েছিলেন এবং এর সময় নির্ধারণ করেন দুই সপ্তাহ আগে।