শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, বিপন্ন হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য

শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ জীবন
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত জলাশয় কাস্পিয়ান সাগর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। আজারবাইজান, রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ইরানের মাঝে অবস্থিত এই সাগরের জলস্তর কমে যাওয়ার প্রভাব এখন খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরা।
কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের বাস্তুতন্ত্রবিদ আদিলবেক কোজিবাকভ জানান, শৈশবে যেই ক্যাভিয়ার ছিল প্রতিদিনের খাদ্য, সেটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। স্টারজন মাছের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে এবং সাগরের অস্তিত্বও হুমকির মুখে। অতিরিক্ত মাছ ধরা, শিল্প দূষণ এবং অব্যবস্থাপনায় এই সংকট আরও গভীর হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে Nature সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, শতাব্দীর শেষ নাগাদ কাস্পিয়ান সাগরের পৃষ্ঠতলের উচ্চতা ১৮ মিটার পর্যন্ত কমে যেতে পারে, ফলে প্রায় ৩৪ শতাংশ জলতল হারিয়ে যাবে। এতে বিপন্ন হবে কাস্পিয়ান সিল ও স্টারজন মাছের বাসস্থানসহ পুরো অঞ্চলটির বাস্তুব্যবস্থা।
সাগরের পানির ৮০–৮৫ শতাংশ আসে রাশিয়ার ভলগা নদী থেকে। কিন্তু বছর ধরে রাশিয়ায় ভলগা নদীর ওপর একাধিক বাঁধ ও পানি সংরক্ষণ প্রকল্প চালু হওয়ায় এখন কম পানি পৌঁছাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগরে। কৃষি ও শিল্পখাতে অতিরিক্ত পানি ব্যবহারের প্রভাবও বড় ভূমিকা রাখছে।
পরিবেশবিষয়ক আইনজীবী ভাদিম নি ‘সেভ দ্য কাস্পিয়ান সি’ প্রচারণা শুরু করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, বিদেশি তেল কোম্পানির সঙ্গে করা গোপন চুক্তিগুলোর কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও আদালত তাঁর মামলা খারিজ করে দিয়েছে, তবুও তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
আকতাউ শহরে কোজিবাকভ স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই সচেতনতা নিচুতলা থেকে গড়ে উঠুক, যেন সরকার বোঝে সাধারণ মানুষ কতোটা উদ্বিগ্ন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাস্পিয়ান সাগরের পরিণতি যেন আরাল সাগরের মতো না হয়, সেজন্য এখনই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। নয়তো এই সাগরের হারিয়ে যাওয়া শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায়ও বিপর্যয় ডেকে আনবে।