কেমন হবে জাহান্নামীদের কবরের জীবন?

মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়য় আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার পবিত্র কালামে এরশাদ করেছেন:
হে নবী! যদি আপনি দেখতেন, যখন অন্যায়কারীরা মৃত্যু-যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে; তখন ফেরেশ্তারা তাদের হাত প্রসারিত করে বলেন- ''তোমরা তোমাদের প্রাণ বের করে দাও! তোমরা যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করতে এবং গর্ব ও অহংকার করে তাঁর আয়াতসমূহ এড়িয়ে চলতে; তাঁর প্রতিফলস্বরূপ আজ তোমাদেরকে দেয়া হবে অবমাননাকর শাস্তি ।’’
-সূরা আল আন’আমঃ ৯৩
এ ঘোষণার পর অবিশ্বাসীদের কবর জীবনের শুরু হবে। দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার মুহূর্ত ও আখিরাতের পথে রওনা দেয়ার সন্ধিক্ষণে অবিশ্বাসী ব্যক্তির কাছে কৃষ্ণবর্ণের কয়েকজন ফেরেশতা অবতরণ করবেন, তাদের সাথে থাকবে ‘মুসুহ’ বা মোটা-পুরু কাপড়। ফেরেশতারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কাছে অবস্থান করবে। ভিজা তুলা থেকে অনেক কাঁটাযুক্ত লাঠি যেভাবে বের করা হয় মালাকুল মাওতের ঘোষণার পর সেভাবে অবিশ্বাসী ব্যক্তির আত্মা তার দেহ থেকে বের করে আনা হবে। এতে তার সকল শিরা উপশিরা ছিড়ে বের হয়ে আসবে। মালাকুল মাওত আত্মাটি গ্রহণ করার পর চোখের পলক ফেলার মতো মুহূর্তও তা হাতে না রেখে মোটা-পুরু কাপড়টিতে রেখে দিবে। অবিশ্বাসী আত্মা থেকে এ পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকবে। তারপর অবিশ্বাসী ব্যক্তির আত্মাকে নিয়ে ফেরেশতারা আসমানের দরজার দিকে যাত্রা শুরু করবে। ফেরেশতাদের কোনো দল এ সময় পাশ দিয়ে গেলে জিজ্ঞাসা করবে, এ খবিস রুহ কে? তারা বলবে, অমুকের সন্তান অমুক। তখন তাকে ডাকা হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নামে। এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হবে এবং তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হবে। দরজার রক্ষক জিজ্ঞাসা করবে এ আত্মা কি পাপাত্মা নাকি পূণ্যাত্মা? পাপাত্মা হওয়ায় তাকে আসমানের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তার জায়গা হবে নিম্ন ভূমির সিজ্জিনে।
তারপর, আকাশ থেকে অবিশ্বাসী আত্মাকে ছুড়ে মারা হলে তা তার শরীরে এসে প্রবেশ করবে। ফিরে আসার পর সে দেখবে তার সঙ্গীরা তাকে কবরে দাফন করে রেখে চলে যাচ্ছে। সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে থাকবে। আওয়াজ শুনে অবিশ্বাসী আত্মা বুঝবে ধীরে ধীরে তার সাথীরা দূরে চলে যাচ্ছে। ঠিক তখনই তার সামনে দু’জন নীল চোখ বিশিষ্ট কৃষ্ণকায় ফেরেশতা এসে উপস্থিত হবেন। তাদেরকে বলা হয় মুনকার ও নাকির।
অবিশ্বাসী আত্মাকে বসিয়ে তারা জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার রব কে?
সে বলবে: হায়! হায়! আমি জানি না।
তারা বলবে: তোমার দ্বীন কী?
সে বলবে হায়! হায়! আমি জানি না।
তারপর মুনকার ও নাকির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি পৃথিবীতে কী বলতে?
অবিশ্বাসী ব্যক্তি এ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারবেনা।
বলা হবে- তাঁর নাম কি মুহাম্মদ?
সে বলবে: আমি কিছুই বলতে পারি না। তবে লোকেরা যা বলতো আমিও তাই বলতাম।
তখন ফেরেশতারা তাকে বলবে, তুমি বিবেক-বুদ্ধি দিয়েও তা বুঝতে চেষ্টা করনি। এমনকি আল্লাহর বাণীসমূহ পাঠ করেও তা জানতে চেষ্টা করনি।
তারপর তার জন্য বেহেশতের একটি সুড়ঙ্গ পথ খুলে দেওয়া হবে। তা দিয়ে সে জান্নাতের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবে। তারপর তাকে বলা হবেঃ দেখ! আল্লাহ তা’আলা কীভাবে তোমার কাছ থেকে তাঁর নিয়ামতসমূহ ছিনিয়ে নিয়েছেন।
তারপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি সুড়ঙ্গ পথ খুলে দেওয়া হবে। তা দিয়ে সে দেখতে পাবে আগুনের স্ফুলিঙ্গসমূহ দাউদাউ করে জ্বলছে। তাকে বলা হবে এটাই হলো তোমার চিরস্থায়ী আবাসস্থল। কারণ তুমি সংশয়ের উপর ছিলে এবং এ সন্দেহের উপরই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ। এর উপরই তুমি পুনরায় উত্থিত হবে ইন শা আল্লাহ!
অবিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের এ দরজা সবসময় খোলা থাকবে; সেখান থেকে সবসময় তার কবরে উত্তাপ ও উত্তপ্ত হাওয়া আসবে।
তারপর জমিনকে বলা হবে, হে জমিন! তাকে চেপে ধরো! তবে, বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী প্রত্যেক ব্যক্তিকেই কবরে চাপ দেয়া হবে।
জমিন অবিশ্বাসী ব্যক্তিকে এত জোরে চেপে ধরবে যে, তার বুকের হাড়গুলো একদিক থেকে অন্য দিকে চলে যাবে।
তারপর বিশ্রী মুখ বিশিষ্ট জীর্ণ কাপড় পরা দুর্গন্ধযুক্ত এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলবে: তুমি এমন একটি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমার অনিষ্ট করবে। আজ সেই দিন যে দিনের অঙ্গীকার তোমাকে দেওয়া হয়েছিল।
সে বলবে: তুমি কে? তোমাকে আল্লাহ এমন দুঃসংবাদ দিয়ে পাঠিয়েছেন? তোমার চেহারাতো সেই চেহারা যা অনিষ্ট বয়ে আনে!
সে বলবে: আমি তোমার মন্দ আমল। আল্লাহর কসম! তুমি তাঁর আনুগত্যের প্রতি ছিলে অত্যন্ত নিশ্চল এবং তাঁর নাফরমানির প্রতি ছিলে চতুর। সুতরাং আল্লাহ তোমার মন্দ কাজের যথাযথ প্রতিদান দিয়েছেন।
তারপর অবিশ্বাসী ব্যক্তিটির জন্য একজন অন্ধ, বধির এবং কুৎসিত ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে, তার হাতে থাকবে একটি লোহার হাতুড়ি। এটি দিয়ে তাকে আঘাত করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে। যদি এটি দিয়ে কোনো পাহাড়েও আঘাত করা হয় তবে পাহাড়টিও মাটির সাথে মিশে যাবে। আবার আল্লাহ তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন; তারপর আবার তাকে এভাবে মারা হবে। সে ব্যথায় বিকটভাবে চিৎকার করতে থাকবে। তার চিৎকার জ্বীন ও মানুষ ছাড়া অন্যান্য সব সৃষ্টিজীব শুনতে পাবে।
কিয়ামতের আগে কবরের জীবনে প্রত্যেক অবিশ্বাসীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে এসব শাস্তি। যা থেকে কেউ মুক্তি পাবেনা। কোনো অবিশ্বাসী আগুনে পুড়ে বা পানিতে ডুবে মারা গেলেও কবরের জীবনের শাস্তি তাকে পেতেই হবে। কোনো হিংস্র জীব-জন্তুর আক্রমণে যদি অবিশ্বাসী ব্যক্তি প্রাণীটির পেটেও চলে যায় তবুও তার জন্য কবরের জীবনের শাস্তি অনিবার্য। সে যে অবস্থায়ই থাকুক তাকে এ শাস্তি ভোগ করতেই হবে। আর, প্রত্যেক বিশ্বাসী ব্যক্তির কবর জীবন হবে প্রশান্তির!...
অনলাইন নিউজ পোর্টাল