লন্ডন বৈঠকে বরফ গলেছে, তবে পুরোটাই নয়: মাহমুদুর রহমান মান্না

লন্ডনে সরকার ও বিএনপির আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস ছিলেন মধ্যস্থতাকারী
লন্ডনে সরকার ও বিএনপির মধ্যকার আলোচিত সংলাপ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থার বরফ কিছুটা গলেছে। তবে এখনো পুরোপুরি সমাধানের পথে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
রোববার এক বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যে তিনি বলেন, “লন্ডন সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বাঁক তৈরি করেছে। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে। তবে এখনও বিরাজমান আছে মতানৈক্য ও আস্থার সংকট।”
ইউনূসের কূটনীতি ও সংলাপ প্রসঙ্গ
মান্না বলেন, সংলাপের উদ্যোগ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকেই এসেছিল এবং বিএনপি তা সম্মান জানিয়েই অংশ নেয়। তবে আলোচনার ফলাফলে অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক কৌশলের ঘাটতি দেখিয়েছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, “এই সংলাপে ড. ইউনূস পরাজিত হয়েছেন, এবং এতে তাঁর কৌশলের অভাব স্পষ্ট।”
একক সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ
মান্না জানান, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের বৈঠক ও যৌথ বিবৃতিতে অন্যান্য দল উপেক্ষিত বোধ করেছে। তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও আরও কয়েকটি দল সরকারের এ ধরনের একপাক্ষিক আচরণে ক্ষুব্ধ। অথচ এমন সিদ্ধান্ত সবার সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া যেত।”
তবে নাগরিক ঐক্য ও গণতন্ত্র মঞ্চ এই প্রসঙ্গে ‘সেন্টিমেন্ট’ দেখায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বুঝি এই সরকার এসব আবেগ বা প্রতিক্রিয়ার কদর করে না। তবুও লন্ডন সংলাপ রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রেখেছে।”
রাজনৈতিক সহনশীলতার আহ্বান
মান্না বলেন, “এখন দরকার রাজনৈতিক সহনশীলতা, নম্রতা ও যুক্তিভিত্তিক সংলাপ। ঝগড়া-বিবাদ করে লাভ নেই। ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকারের কোনো দীর্ঘস্থায়ী বৈধতা নেই। তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই মানে ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াই। এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন।”
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা ও জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ
ঐকমত্য কমিশনের চলমান বৈঠক প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ৭০ ধারা ও সংসদের কিছু স্ট্যান্ডিং কমিটিতে বিরোধী দলের সভাপতিত্ব বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, উচ্চকক্ষ নির্বাচন, নারী আসন বৃদ্ধি ও সাংবিধানিক কাউন্সিল বিষয়ে এখনো মতানৈক্য কাটেনি।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদিও জুলাই সনদ নিয়ে প্রত্যাশা রয়েছে, তবুও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। দেশত্যাগী পরাজিত শক্তি তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।”
শেষ কথা: গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হোক রাজনীতি
সবশেষে মান্না বলেন, “লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির বরফ গলতে শুরু করেছে, তবে এখনো অনেক পথ বাকি। ভবিষ্যদ্বাণী করা না গেলেও আশা করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো একে একে মতপার্থক্য কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে এবং গণতন্ত্রের পথে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।”