বাংলাদেশ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী ইইউ, জুলাইয়ে আসছে অনুসন্ধানী দল

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত মে মাসে ইইউ সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ছোট পরিসরে একটি প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের সম্মতির ভিত্তিতে ব্রাসেলসে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ইইউ’র সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাই মাসেই ইইউ’র প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল ঢাকা সফর করতে পারে।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে প্রাক-নির্বাচনি দল আগ্রহী দেশে সফর করে থাকে। কারণ, চূড়ান্তভাবে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলে, তাদের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন হয়।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল জানুয়ারি মাসে। ওই নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ইইউ একটি অনুসন্ধানী দল পাঠিয়েছিল, যারা শতাধিক বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচনি পরিবেশ পর্যালোচনা করেছিল।
২০২৩ সালের ওই সফরে ছয় সদস্যের অনুসন্ধানী দলটির নেতৃত্বে ছিলেন রিকার্ডো চেলেরি। দলটি সম্ভাব্য পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক, নিরাপত্তা এবং বাজেট সংক্রান্ত বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে। এ সময় তারা বিএনপি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা, সংখ্যালঘু সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছিল।
২০০০ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৬৫টিরও বেশি দেশে ১৮০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনা করেছে। এটি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে সমর্থন করার ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত।
ইইউ ২০০১ ও ২০০৮ সালের বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠালেও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি।
একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, “ইইউ কিংবা সমমনা দেশগুলো সব দেশে পর্যবেক্ষক দল পাঠায় না। যেসব দেশে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ঘাটতি রয়েছে বলে তাদের মনে হয়, সেখানে তারা পর্যবেক্ষক পাঠায়।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে যে বিদেশি সহায়তা দেওয়া হয়, সেটি করদাতাদের অর্থের মাধ্যমে আসে। তাই তারা নিশ্চিত হতে চায় এই সহায়তা কোনো অনির্বাচিত সরকারের হাতে যাচ্ছে না।”
ইইউ’র অনুসন্ধানী মিশন সাধারণত নিচের বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে:
পরিধি: নির্বাচনের স্কেল ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্র
পরিকল্পনা: লজিস্টিক ও অপারেশনাল পরিকল্পনা
বাজেট: সম্ভাব্য ইইউ পর্যবেক্ষণ মিশনের আর্থিক কাঠামো
লজিস্টিক: পর্যবেক্ষকদের সহায়তা ও মোতায়েন ব্যবস্থা
নিরাপত্তা: মাঠ পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা
অংশীদার সংযোগ: রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা ও সংখ্যালঘু সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক ও মতামত নেওয়া
একজন সাবেক কূটনীতিক এ প্রসঙ্গে বলেন, “বৈদেশিক সম্পর্ক জটিল বিষয়। অনেক সময় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলেও তারা সহায়তা অব্যাহত রাখে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে যোগাযোগ বন্ধই তাদের সর্বশেষ পদক্ষেপ হয়।”