রিজার্ভ বেড়ে ২৫.৫১ বিলিয়ন ডলার, জুনেই হতে পারে ৩২ বিলিয়ন!

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও জাপানের আর্থিক সহায়তায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন করে স্বস্তি ফিরেছে। চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় সম্প্রতি দুই কিস্তিতে মোট ১৩৪ কোটি ডলার রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফের হিসাবপ্রণালী বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব পদ্ধতিতে হিসাব করলে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে হুন্ডির বদলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, যার ফলে ডলারের বাজারে চাপ হ্রাস পেয়েছে এবং রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, টানা ১০ মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও রাজস্ব খাত সংস্কার, বাজেট সহায়তা এবং উন্নয়ন খাতে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণ এসেছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) জাপান থেকে ৪২ কোটি ডলার ঋণ এসেছে, যা সরাসরি রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে।
চলতি জুন মাসেই আইএমএফ আরও ৯০ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এআইআইবি (এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক), জাপান এবং ওপেক ফান্ড থেকেও আরও ১০০ কোটি ডলারের ঋণ আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ফলে, মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবায়ন অনুযায়ী রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করতে পারে বলে ধারণা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
প্রবাসী আয়ের দিক থেকেও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেই রেমিট্যান্স এসেছে ২৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার— যা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি।
রফতানি খাতেও ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যেখানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। এর ফলে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে এবং রিজার্ভে ইতিবাচক সাড়া পড়ছে।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে দেশে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় বর্তমানে রিজার্ভ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকেই।
অর্থনীতিবিদ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সুশাসন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ এবং বিদেশি অর্থায়ন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে রিজার্ভ ধীরে ধীরে আরও সুসংহত হবে।