প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর—আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা
এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন—সংবিধানে এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। বিএনপি, এনডিএম ও বাংলাদেশ এলডিপি এ প্রস্তাবের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকের পঞ্চম দিনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলোচনা চলে। এতে ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তবে তা হবে পূর্ণ মেয়াদ নাকি শুধু দু’বার শপথ গ্রহণ—এই বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই দ্বিধার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সর্বোচ্চ ১০ বছর’ মেয়াদের একটি প্রস্তাব দেন, যা জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ দল সমর্থন করলেও বিএনপি, এনডিএম ও এলডিপি আপত্তি তোলে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, এই তিন দলের আপত্তির কারণে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আবার আলোচনা করা হবে।
রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়েও বিভক্ত মত
একই বৈঠকে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়েও তীব্র বিতর্ক হয়। বিদ্যমান চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—অক্ষুণ্ন রাখার পক্ষে বামপন্থী দলগুলো অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বেশিরভাগ দল চায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রকে প্রতিস্থাপন করতে। ধর্মভিত্তিক দলগুলো ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করার দাবি তোলে।
বিএনপি পঞ্চম সংশোধনীর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান মূলনীতি সমর্থনের পাশাপাশি নতুন কিছু যুক্ত করতে আপত্তি না জানালেও জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি পুরাতন চার মূলনীতি বাদ দিয়ে নতুন মূলনীতি প্রস্তাব করে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রের মূল কাঠামো হওয়া উচিত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও তৎকালীন ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে, যেখানে সাম্য, মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা বলা হয়েছিল।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা অনেক সময় নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে একমত হচ্ছি। কিন্তু কিছু দল একেবারে অনড়। এভাবে চললে কখনোই জাতীয় ঐক্য সম্ভব হবে না।’
পরবর্তী পদক্ষেপ
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, আলোচনার ভিত্তিতে একটি লিখিত প্রস্তাব প্রস্তুত করা হবে এবং পরে তা দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হবে। আলোচনা পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।