ট্রাম্পের ধ্বংস দাবির সঙ্গে মিলছে না গোয়েন্দা তথ্য

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ অভিযানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবি করলেও বাস্তবতা নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। বিশেষ করে ইরানের অন্যতম সুরক্ষিত ফোরদো স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে—এমন দাবি এখনই স্বীকার করতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তারা।
শনিবার রাতে চালানো এই অভিযানের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ফোরদোসহ ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো "সম্পূর্ণরূপে এবং চূড়ান্তভাবে ধ্বংস" করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলি ও মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক বিশ্লেষণ বলছে, ফোরদো গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।
দুই ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার আগেই ইরান ফোরদো স্থাপনাটি থেকে ইউরেনিয়াম ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ৩০ হাজার পাউন্ড বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ব্যবহার করেও ফোরদোর মতো গভীর এবং সুরক্ষিত স্থাপনাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা কঠিন।
পেন্টাগনের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন বলেন, “তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য, স্যাটেলাইট ছবি এবং নজরদারি উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—ফোরদোর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ধুলো, ধ্বংসাবশেষ এবং ভূমির রঙ ও গঠনের পরিবর্তন স্পষ্ট। মার্কিন কোম্পানি ম্যাক্সার টেকনোলজিসের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, স্থাপনাটির পাশে অন্তত ১৬টি পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল, যা হামলার আগেই সরঞ্জাম স্থানান্তরের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
লন্ডনের ওপেন সোর্স সেন্টারের বিশ্লেষণেও একই রকম ইঙ্গিত মিলেছে—ইরান হামলার প্রস্তুতি সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা পেয়েছিল এবং কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে তারা কী সরিয়েছে, আদৌ কিছু সরিয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ও পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা মিক মালরয়ের মতে, এই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত দুই থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে যেতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, হামলার ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব প্রস্তুত করা হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখনও চূড়ান্ত মূল্যায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।