ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে শঙ্কায় বিশ্ববাজার, ডলারের বড় ধস

ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে ডলার
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থবাজারে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এর ফলে তিন বছরের মধ্যে ডলার এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে চলে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্লেষকরা।
বুধবার (২৫ জুন) এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে ‘টেরিবল’ বা বাজে মন্তব্য করে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ফেডের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর বিবেচনায় আছেন তিন থেকে চারজন। এই মন্তব্যের পরপরই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং ডলার সূচক তীব্রভাবে পতিত হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই অবস্থান ফেডের স্বাধীনতা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর আস্থার সংকট তৈরি করছে। আরবিসি ব্লুবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক কাসপার হেনস বলেন, “আমরা ডলারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অবক্ষয় এখনো পুরোপুরি বাজারে প্রতিফলিত হয়নি।”
ডলারের দর ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে, যা ২০০৩ সালের পর সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স। ডলারের পতনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াও সুদের হার কমার সম্ভাবনাও বড় ভূমিকা রাখছে।
ফেডের নীতিনির্ধারক মিশেল বোম্যান বলেছেন, “সুদের হার কমানোর সময় কাছে চলে এসেছে।” তার এই মন্তব্যও ডলার দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ। এক সপ্তাহ আগেও বাজারে ধারণা ছিল, জুলাইয়ে সুদ কমার সম্ভাবনা ১২.৫%, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫%।
জার্মানি নিউইয়র্ক ফেডে রক্ষিত স্বর্ণভান্ডার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) তাদের ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করছে, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সংকটকালীন ডলার সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে কী হতে পারে তা বিবেচনায় রাখে।
সোসিয়েতে জেনারেলের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা বিশ্লেষক কিট জুকেস বলেন, “বাজার এখন ট্রাম্পের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কোনো ফেড চেয়ারম্যান পছন্দ হবে বলেই আশঙ্কা করছে। তবে সম্ভাব্য নিয়োগের গুঞ্জনের চেয়েও বেশি উদ্বেগের কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে নিরপেক্ষতা হারানোর সম্ভাবনা।”
থিংকট্যাংক AMFIF-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবস্থাপকের মধ্যে ৭০% বলেছে—যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তাদের ডলারে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। এই হার গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
প্রিন্সিপাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বৈশ্বিক কৌশলবিদ সিমা শাহ বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মতো সময়েও ডলার তার নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারেনি। এটা স্পষ্ট, ডলার আর আগের মতো নিরাপদ আশ্রয় নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি নতুন ফেড চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলবে।”
ডলারের দুর্বলতার সুযোগে ইউরোর দর ১.১৭ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ING ব্যাংকের মতে, ইউরোর লক্ষ্য এখন ১.২০ ডলার, তবে তা নির্ভর করবে ডলারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা হ্রাস পায় তার ওপর।