“১৬ বছরের অসামঞ্জস্যতা থেকে উত্তরণে জরুরি সুষ্ঠু নীতি” — বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, “বিগত ১৬ বছরের নীতিগত অসামঞ্জস্যতা ও অপরিকল্পিত ক্রিমিনালাইজেশন থেকে উত্তরণে এখনই সুনির্দিষ্ট ও সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “এ জন্য আমাদের কগনিজেন্ট হতে হবে এবং নিয়ামকগুলোকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ‘অটোমোবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইআরএফ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১০ কোটি টন বাল্ক কার্গো আসে, যার মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট ক্লিঙ্কার, সার ও খাদ্যশস্য। অথচ আমাদের লজিস্টিক খরচ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের ৪১ বিলিয়ন কিলোমিটার টন লজিস্টিক প্রয়োজন রয়েছে, যা ২০৪০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে ৩০০ বিলিয়ন কিলোমিটার টনে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ লজিস্টিক খাতে যুক্ত। এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় হয়, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রেইট চার্জ, বিমান ভাড়া, পোর্ট খরচ ইত্যাদি। এই অর্থের ক্যাশ আউটফ্লো কমাতে হলে কার্যকর নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি।”
তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতির মূল তিন স্তম্ভ—কৃষি, শিল্প এবং সেবা—এই তিনটির প্রাইমারি এনাবলার হচ্ছে লজিস্টিক। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ইউটিলিটি, গ্যাস-বিদ্যুৎ এবং শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা। সব মিলিয়ে আমাদের ভোগ্যপণ্যের বাজার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের।”
দেশের ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের দেশে দুই শতাধিক নদী আছে, যা দেশে শক্তিশালী লজিস্টিক হাব গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে। সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের মতো জায়গাগুলো ঐতিহাসিকভাবে লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খনিজ সম্পদ না থাকলেও রয়েছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। যদি এই জনশক্তিকে দক্ষভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে লজিস্টিক ক্যাপাসিটি ও শ্রম উৎপাদনশীলতার সমন্বয়ে আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “বাজেট হলো নীতির একটি ম্যানিফেস্টেশন। সেখানে অটোমোবাইল খাত ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে গাড়ি উৎপাদনের নামে বিদেশ থেকে পুরো বডি এনে শুধুমাত্র চাকা লাগিয়ে নামমাত্র উৎপাদন করা হয়েছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটিয়ে এখন বাস্তবসম্মত ও টেকসই নীতি গ্রহণ করতে হবে।”
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন: বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা এবং সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।