রাজবাড়ীতে রাজনীতির পালাবদল: আত্মগোপনে আওয়ামী লীগ, সক্রিয় বিএনপি-জামায়াত

রাজবাড়ীর রাজনীতিতে ফের সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বিরোধী দলগুলো, আত্মগোপনে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজবাড়ীতে রাজনীতির চিত্র পাল্টে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা এখন আত্মগোপনে। অনেকেই কারাবন্দী। অন্যদিকে রাজনৈতিক মাঠে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আত্মগোপনে আওয়ামী লীগ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয় ও নেতাদের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, সহসভাপতি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর ব্যক্তিগত স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনার পর থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা–কর্মী আত্মগোপনে আছেন। ইতিমধ্যে কাজী কেরামত আলীসহ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। জেলার বিভিন্ন থানায় ও ডিবি কার্যালয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে, যাতে প্রায় ৩৭০ জনকে এজাহারভুক্ত এবং ৯০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বিএনপিতে সক্রিয়তা, তবে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি
দীর্ঘ সময় চাপের মধ্যে থাকা বিএনপি এখন রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট। রাজবাড়ী-১ (সদর ও গোয়ালন্দ) ও রাজবাড়ী-২ (পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী) আসনে স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। ২৩ ফেব্রুয়ারির একটি দলীয় কর্মসূচিতে বাঁশ দিয়ে আলাদা মঞ্চ তৈরির ঘটনা থেকে বিভক্তির প্রমাণ মেলে।
এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ (খৈয়ম) ও নাসিরুল হক (সাবু)। অন্য অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি আসলাম মিয়া ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী জানান, ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর তারেক রহমানের নির্দেশে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় এবং ইতোমধ্যে ৮টির মধ্যে ৭টি ইউনিটে কমিটি গঠিত হয়েছে।
রাজবাড়ী-২ আসনে সম্প্রতি পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হন।
জনসংযোগে ব্যস্ত জামায়াত
দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর জামায়াত এখন রাজবাড়ীতে তৃণমূল পর্যায়েও সক্রিয়। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দল।
রাজবাড়ী-১ আসনে জামায়াতের আমির মো. নুরুল ইসলাম এবং রাজবাড়ী-২ আসনে সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নুরুল ইসলাম বলেন, "ছাত্র-জনতা ও সাধারণ নাগরিকদের বিকল্প শক্তি হিসেবে জামায়াতকে বেছে নেওয়ার আশাবাদী আমরা।"
নিম্নকেন্দ্রিক তৎপরতা অন্যান্য দলের
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বর্তমানে কিছুটা সংগঠিত। তারা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। মুফতি শামসুল হুদা জানান, আদর্শগত মিল থাকলে জামায়াতের সঙ্গে জোট হতে পারে, না হলে এককভাবে নির্বাচন করবে ইসলামী আন্দোলন।
সিপিবি মাঝেমধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকলেও জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির তেমন কোনো তৎপরতা নেই। সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সদস্য সংগ্রহ ও সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের প্রক্রিয়ায় থাকলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি দেয়নি।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাবিবুর রহমান (বাচ্চু) বলেন, “দলীয় কর্মসূচি নেই বলে আমরা কিছুটা নিরব, তবে সাংগঠনিক যোগাযোগ চালু রয়েছে।”