ঠিক এখনই ইরানে হামলা করল কেন ইসরায়েল?

ট্রাম্পের ছায়ায় ইরানে ইসরায়েলের আঘাত—দুই দশকের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিতে বড় ধরনের হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। এর জবাবে রাতেই তেহরান ডজন ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তেল আবিব ও জেরুজালেমের দিকে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, “যত দিন হুমকি থাকবে, তত দিন হামলা চলবে।” এ হামলায় জোরালো সমর্থন জানান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষায়, “আমরা সুযোগ দিয়েছিলাম, ইরান তা নেয়নি। তারা বড় আঘাত পেয়েছে—আরও আসছে।”
এই মুহূর্তে কেন হামলা?
১. দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি: গত দুই দশক ধরে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। ১৯৮১ সালে ইরাক ও ২০০৭ সালে সিরিয়ায় পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংসের নজির রয়েছে। তবে এত দিন ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া বড় ধরনের হামলা করেনি।
-
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ: এপ্রিল মাসে দামেস্কে ইরানি জেনারেল নিহত হওয়ার পর ইরান পাল্টা ড্রোন হামলা চালায়, যা ব্যর্থ হয়। এরপর ইসরায়েল সিরিয়ায় বিমান প্রতিরক্ষা ধ্বংস করে এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ইরানের ভেতরে আঘাত হানার উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।
-
ট্রাম্পের ভূমিকা: ইসরায়েল ট্রাম্পের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছিল। যদিও তিনি প্রকাশ্যে ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির কথা বলেছিলেন, বাস্তবে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার প্রতি তিনি সমর্থন দিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে ইসরায়েলকে মার্কিন সেন্টকমের অংশ করা হয়, যার ফলে মার্কিন গোয়েন্দা সহযোগিতা সহজ হয়।
গাজার প্রেক্ষাপট
এই হামলার পর প্রশ্ন উঠেছে, গাজায় হামলা কি থামবে? নেতানিয়াহু এখনো গাজায় হামাস নির্মূল এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে অনড়। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজায় অবকাশযাপনকেন্দ্র ও ইসরায়েলি বসতি গড়ার বিষয়টি এখনো আলোচনায় রয়েছে।
রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ
ইরানে হামলায় ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। এতে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তিনি অতীতে দাবি করেছেন, এমন অনেক সিদ্ধান্ত তিনি বড় শক্তির চাপে নিয়েছেন। যদিও বিশ্লেষকদের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
উপসংহার
ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম গত ডিসেম্বরে নতুন মাত্রা পায়, যখন দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়ায়। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির এক ধাপের মধ্যে। এই পরিস্থিতি, ইসরায়েলের বহু বছরের সামরিক প্রস্তুতি ও ট্রাম্পের সমর্থন—এই তিনের সমন্বয়ে হামলাটি ঘটেছে।