অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনে ভ্যাট বেড়ে তিন গুণ, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় ছোট উদ্যোক্তারা

অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনে ভ্যাট তিনগুণ বেড়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত!
ই-কমার্স খাতে ইন্টারনেটের দাম কমানোর প্রত্যাশার বদলে আগামী বাজেটে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব উঠেছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দেন, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বিনিয়োগ এখনও সীমিত এবং বাজারও দুর্বল। এ খাতে ভ্যাট বাড়ালে সরকার যে রাজস্ব আয় করবে, তা খুব বেশি নয়। বরং লোকসানে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিনিয়োগ থেকেই অতিরিক্ত ভ্যাট দিতে হবে।
আগে পণ্য বিক্রেতারা ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতেন, অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্যের বিক্রি থেকে ৫ টাকা ভ্যাট দিতে হতো। এখন সেটি বেড়ে ১৫ টাকা হওয়ায় বিক্রেতারা দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন, যা ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে। যারা সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রি করে তাদেরও বেশি ভ্যাট দিতে হবে। ফলে উদ্যোক্তা এবং ভোক্তা—উভয়ের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং ই-কমার্স খাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডালের সিইও ওয়াসিম আলিম বলেন, “ই-কমার্স এমন একটি খাত যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বৃদ্ধি পায় না। সফল দেশগুলো যেখানে মাথাপিছু ৭০ থেকে ২০০ ডলার বিনিয়োগ করেছে, সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ৩ ডলারের নিচে বিনিয়োগ হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করার বদলে নতুন করে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ই-কমার্স শহরের অবকাঠামোর ওপর চাপ কমাতে পারে, কিন্তু আমরা এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি না।”
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনলাইন ও ই-কমার্স বাজারের মূল্যমান প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা এবং এতে প্রায় ৫ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিক্রেতা রয়েছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া না নিয়ে অনলাইনে বিক্রি করেন, তাই ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে তাদের ওপর।
রাইডশেয়ারিং ও ডেলিভারি সেবা প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের সিইও ফাহিম আহমেদ মনে করেন, অনলাইন ও ই-কমার্স দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে পারে এবং কর আহরণের সুযোগ বাড়ায়। তবে ভ্যাট বৃদ্ধি এ খাতের বিনিয়োগ ও বৃদ্ধিকে সীমিত করবে।
দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হাসিনুল কুদ্দুস বলেন, “৯৫ শতাংশ বিক্রেতাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় অতিরিক্ত ভ্যাট তাঁদের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হবে।”
সরকারি তথ্য মতে, দেশের প্রায় অর্ধেক পরিবার এখনও সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে না, যা অনলাইন ব্যবসার বৃদ্ধিতে বাধা।
ই-কমার্স পিকাবোর সহপ্রতিষ্ঠাতা মরিন তালুকদার বলেন, “দেশে অনলাইন ব্যবসার অবকাঠামো ও ইন্টারনেটের খরচের কারণে অনেক জটিলতা রয়েছে। এই খাত আগামী পাঁচ বছরে বড় হবে, তখন বাড়তি ভ্যাট আরোপের বিষয়টি যুক্তিসংগত হবে। তবে বর্তমানে ১০ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো চাপ সৃষ্টি করছে।”
ই-ক্যাবের প্রশাসক সাঈদ আলী বলেন, “বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ক্ষুদ্র, তাই অতিরিক্ত ভ্যাট তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী ফুডপান্ডার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কমিশনের ওপর বাড়তি ভ্যাট লাগলে সেবার খরচ বেড়ে যাবে, যার ফলে ভোক্তারা অনলাইন সেবার বিকল্প খুঁজতে পারেন। এর প্রভাব পুরো ই-কমার্স ও অনলাইন ডেলিভারি খাতে পড়বে।