গোপন বন্দিশালা পরিচালিত হয় ‘হাসপাতাল’ ও ‘ক্লিনিক’ নামে

র্যাবের গোপন বন্দিশালা ‘হাসপাতাল’ ও ‘ক্লিনিকে’ গুমের শিকারদের রাখা হতো—তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে ‘হাসপাতাল’ ও ‘ক্লিনিক’ নামে দুটি গোপন বন্দিশালার বিস্তারিত উঠে এসেছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুমের আলামতগুলো ধ্বংস করা হয়েছে বলে উঠে আসে কমিশনের প্রথম প্রতিবেদনে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে যেসব গোপন বন্দিশালায় গুম শিকার হওয়া ব্যক্তিদের আটকে রাখা হতো, সেগুলোর মধ্যে দুটির সাংকেতিক নাম ছিল ‘হাসপাতাল’ ও ‘ক্লিনিক’। এ দুটি বন্দিশালা পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিল র্যাবের গোয়েন্দা শাখা।
উত্তরার র্যাব-১ কার্যালয়ের চত্বরে থাকা টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল হিসেবে পরিচিত বন্দিশালার সাংকেতিক নাম ছিল ‘হাসপাতাল’। এটি র্যাব সদর দপ্তরের অধীনে পরিচালিত হতো। তবে সুনির্দিষ্টভাবে দেখভাল করত র্যাবের গোয়েন্দা শাখা।
‘ক্লিনিক’ হিসেবে পরিচালিত বন্দিশালাটির অবস্থান ছিল র্যাব সদর দপ্তরের চত্বরেই। কাচঘেরা কাঠামো হওয়ায় একে ‘গ্লাস হাউস’ নামেও ডাকা হতো।
গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এই দুটি গোপন বন্দিশালার বিস্তারিত উঠে এসেছে। ৪ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনোসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে গুমের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রতিটি বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করছে। গত ১৪ ডিসেম্বর প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল কমিশন। সেই প্রতিবেদনে গত ১৫ বছরে সংঘটিত গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণের কথা বলা হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুমের আলামত ধ্বংসের ঘটনাও উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলসহ (জেআইসি) বিভিন্ন সংস্থায় গুমের আলামত মুছে ফেলা হয়।
টিএফআই সেলটি তিনটি আলাদা অংশে বিভক্ত ছিল: প্রশাসনিক এলাকা, বৃহত্তর বন্দিশালা ও নির্যাতন/জিজ্ঞাসাবাদের ছোট এলাকা।
‘হাসপাতাল’–এর খোঁজ যেভাবে
২০১৬ সালের ৯ আগস্ট মীর আহমদ বিন কাসেম (ব্যারিস্টার আরমান) গুম হন। তিনি জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে। ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট তিনি ফিরে আসেন। তাঁর দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী ‘হাসপাতাল’ বন্দিশালার অবস্থান শনাক্ত করে কমিশন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল, আরমান ডিজিএফআইয়ের ‘আয়নাঘর’ (জেআইসি)-এ ছিলেন। তবে তাঁর বর্ণনার সঙ্গে ডিজিএফআই বন্দিশালার বৈশিষ্ট্যের মিল না থাকায় সন্দেহ জাগে। তিনি বলেছিলেন, তাঁর পায়ের নিচের মেঝে ছিল ঠান্ডা ও টাইলস করা—যা জেআইসি-তে ছিল না।
কমিশন পরে টিএফআই সেলের পরিত্যক্ত স্থাপনায় গিয়ে আরমানের বর্ণনার সঙ্গে মিল পায়। এই সেলটি পরে চিহ্নিত হয় ‘হাসপাতাল’ হিসেবে। এরপর তদন্তের ধারা পাল্টে যায়।