আব্বার সঙ্গে শেষ স্মৃতিটা কোনো দিন ভুলতে পারব না

জেলেদের মাছ বিক্রি দেখছেন আরিফুল, যেমনটি এক সময় করতেন তাঁর বাবা কোহিনূর শেখ।
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। এই দিনে সন্তানদের হৃদয়ে বাবা স্মরণ হন ভালোবাসা, শাসন আর ত্যাগের প্রতীক হয়ে। ঠিক তেমনই একজন ছেলে আরিফুল ইসলাম। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এই তরুণ বাবার সঙ্গে কাটানো ছোটবেলার মুহূর্ত আর শেষ যাত্রার বেদনার কথা জানালেন চোখ ভেজানো এক স্মৃতিচারণে।
শৈশবে এক হাটবাজারে বাবার সঙ্গে গিয়েছিলেন আরিফুল ও তাঁর বোন সীমা খাতুন। সেদিন বাবার কেনা রসগোল্লা আর নতুন জামাটির স্মৃতি এখনও স্পষ্ট। তবে ফেরার পথে বোনের হাত থেকে জামাটি হারিয়ে যায়। বাবা মন খারাপ করেন, বকাও দেন। এই ছোট্ট ঘটনায় বাবার শাসন আর ভালোবাসা আজও মনে গেঁথে আছে।
আরিফুলের বাবা কোহিনূর শেখ ছিলেন একজন পেশাদার জেলে। প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতেন। ছোটবেলায় ছেলেকে বারবার বলতেন, “তোমাকে আমার মতো কষ্ট করতে হবে না, লেখাপড়া শেখো।”
তিনি কখনো এক চাওয়ায় বড় অঙ্কের টাকা দিতেন না। মেয়েরা বাবার কাছে ছোট ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে তদবির করত। এমনই এক গল্পে, আরিফুল মোবাইল কিনতে চেয়েছিলেন। আব্বা প্রথমে রাজি না হলেও পরে ১৮ হাজার টাকা দেন। আরিফুল ফোন না কিনেই ফিরে এলে বাবা বলেন, “১৮ হাজার দিলে কি বাকি দুই হাজার দিতে পারব না? যা, ফোন নিয়ে আয়।”
তবে সবচেয়ে নাড়া দেওয়া স্মৃতিটা ঘটে বাবার মৃত্যুর দিন। এ বছর কোরবানির হাটে গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা–ছেলে। ঢাকার বছিলা হাটে যাওয়ার পথে ট্রাকে উঠতে উঠতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পেছনে ছিলেন কোহিনূর শেখ, ট্রাকের ওপর ছিলেন আরিফুল। টাঙ্গাইলে আরেকটি ট্রাক ধাক্কা দিলে সবাই গরুর নিচে পড়ে যান। গরুর খড় তাঁদের গায়ের ওপর পড়ে।
আরিফুল ও তাঁর স্বজনেরা অক্ষত ছিলেন। কিন্তু বেঁচে ফিরলেন না কোহিনূর শেখ।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পরও জীবনের দায় আর দায়িত্বে ব্যস্ত আরিফুল—কোরবানির পশুর হাটে গেছেন ঠিকই, কিন্তু বুকের ভেতর বাবাহারা এক শূন্যতা।