লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন: কেন মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা এটি বিপজ্জনক?

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভের পটভূমিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের আপত্তি উপেক্ষা করে দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে নতুন বিতর্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি বিশেষ ক্ষমতা ‘টাইটেল টেন অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস কোড’ এর আওতায় নেওয়া হয়েছে, যার ফলে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা সরাসরি ফেডারেল সরকারের অধীনে কাজ করবেন এবং অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসবেন।
বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দশক গুলোর মধ্যে প্রেসিডেন্টের এমন বিরল ক্ষমতা প্রয়োগ, যা অঙ্গরাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের নীতি ও প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ১৯৯২ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস দাঙ্গার সময়েও ন্যাশনাল গার্ড ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এর পর থেকে এমন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা টিয়ার গ্যাস ও ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড ব্যবহার করেছেন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য। তবে ট্রাম্প দাবি করছেন, স্থানীয় প্রশাসন বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ অপরিহার্য ছিল।
সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক জুলিয়েট কায়েম এই পদক্ষেপকে ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, “ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা মূলত বলপ্রয়োগের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মোকাবিলার জন্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “গভর্নরের অনুমতি ছাড়া এই হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।”
ট্রাম্প ও গভর্নর নিউসমের মধ্যে এই ধরনের মতপার্থক্য নতুন নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহু বছর ধরে ডেমোক্র্যাট শাসিত ক্যালিফোর্নিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আসছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফেডারেল অর্থায়ন কমানোর হুমকি দিয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পল ও’ব্রায়েন বলেন, “এটি ভিন্নমত দমনের জন্য নেওয়া একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নয়।”
সিএনএনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাসটেড হার্নডন মনে করেন, হোয়াইট হাউস ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে যাতে ফেডারেল ক্ষমতা প্রদর্শন করে রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার করা যায়।
এই ঘটনায় লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।