রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৩টি ভূমিধস, নিহত ১, আহত ১৩

টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৩টি জায়গায় ভূমিধস হয়েছে। এতে এক মিয়ানমারের নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৩ জন। পাশাপাশি প্রায় ১,৪০০ অস্থায়ী ঝুপড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজার সাব-অফিসের যোগাযোগ সহযোগী মোশারফ হোসেন এক বার্তায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মাত্র দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে এই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাত, ভূমিধস, বন্যা ও ঝড়ো হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেওয়াল ধসে এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর মৃত্যু এবং বজ্রপাতে আহত হয়েছেন ১১ জন। তিনি বলেন, “জনবহুল রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এমন দুর্যোগ অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিপদ আরও বাড়াচ্ছে খাড়া ঢালু জায়গায় অস্থায়ীভাবে নির্মিত ত্রিপল ও বাঁশের ঘরগুলো।”
ইউএনএইচসিআরের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিনিধি জুলিয়েট মুরেকেইসনি বলেন, “এই বিপদ কাটাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কমিউনাল সেন্টারগুলোতে স্থানান্তর করা হচ্ছে। তবে বর্ষার আগেই পর্যাপ্ত আশ্রয়ের ঘাটতি ছিল। সাম্প্রতিক সহিংসতায় রাখাইন রাজ্য থেকে আরও হাজারো রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে, যার ফলে ক্যাম্পগুলোতে ঘনত্ব বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “শেল্টারের জন্য আমাদের আরও জায়গার প্রয়োজন। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কিন্তু বড় আকারে সহায়তা ছাড়া সঙ্কট মোকাবিলা সম্ভব নয়।”
এদিকে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে জানান, “বড় ধরনের অর্থসংকটের কারণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া যায়নি। মে মাসেই সাধারণত বর্ষা প্রস্তুতি শুরু হয়, কিন্তু এ বছর অর্থায়ন না পাওয়ায় শরণার্থীদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালে প্রায় ১৪.৮ লাখ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের জন্য ৯৩.৪ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল চাওয়া হয়েছে, কিন্তু বছরের মাঝপথে এসেও ২০ শতাংশেরও কম অর্থায়ন পাওয়া গেছে। “আমরা দাতাদের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই, তারা যেন মানবিকতার দৃষ্টিতে এই জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ায়,” বলেন গোয়েন লুইস।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে বিভিন্ন ক্যাম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে রোববার রাত ৯টার দিকে ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৮-এ বজ্রপাতে একই পরিবারের পাঁচজন গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন— আনোয়ার বেগম (৪৭), জিয়াউর রহমান (২১), আয়েশা বিবি (১৫), সোনাউল্লাহ (২৮) ও হুসনে আরা (২৪)। তাদের এনজিও ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “টানা বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে বসবাসরত রোহিঙ্গারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ ও এনজিওগুলো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।”