উইঘুর যোদ্ধারা সিরীয় বাহিনীতে, বেইজিং উদ্বিগ্ন

নতুন গঠিত ইউনিটে সাবেক জিহাদিদের যুক্ত করা হবে। ছবি: রয়টার্স
বিদেশি সাবেক জিহাদি বিদ্রোহীদের সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার সরকারি পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র সম্মতি দিয়েছে, যদিও এতে চীনসহ একাধিক দেশের উদ্বেগ বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত থমাস বারাক জানিয়েছেন, সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগে ওয়াশিংটন ‘স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়ার’ শর্তে সমর্থন জানিয়েছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, নতুন গঠিত ৮৪তম সেনা ডিভিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে প্রায় ৩,৫০০ বিদেশি সাবেক জিহাদি যোদ্ধাকে। এর মধ্যে অধিকাংশই চীনের উইঘুর মুসলিম এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে আগত। এই ইউনিটে সিরীয় সেনারাও থাকবেন।
থমাস বারাক বলেন, “এই যোদ্ধারা এখন সিরিয়ার নতুন সরকারের প্রতি অনুগত। তাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা না হলে তারা চরমপন্থি গোষ্ঠীর দিকে ফিরে যেতে পারে।”
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া যুদ্ধে বিদেশি যোদ্ধারা সিরিয়ায় প্রবেশ করে এবং পরে আল-কায়েদার শাখা হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। এইচটিএস ২০২৪ সালে আসাদকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা বিশ্ব HTS-এর চরমপন্থি ইউনিটগুলোর কারণে উদ্বিগ্ন ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র এতদিন সিরিয়ার নতুন সরকারকে বিদেশি যোদ্ধাদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত না করতে চাপ দিচ্ছিল। তবে গত মাসে সৌদি আরবে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসাদ যুগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মতি দেন, এবং এরপরই ওয়াশিংটনের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন হয়।
এই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন চীন, কারণ অন্তর্ভুক্ত হতে যাওয়া অনেক যোদ্ধা উইঘুর মুসলিম, যারা একসময় তুর্কিস্তান ইসলামি পার্টি (TIP)-এর সদস্য ছিলেন। বেইজিং এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “সিরিয়া যেন আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে এবং সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।”
TIP-এর রাজনৈতিক কর্মকর্তা ওসমান বুগরা জানিয়েছেন, “আমাদের সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত। আমরা এখন সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই কাজ করছি। কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক নেই।”
প্রেসিডেন্ট আহমেদ শারা জানিয়েছেন, যারা আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে কিন্তু এখন নতুন সরকারকে সমর্থন করছে, তাদের নাগরিকত্বসহ সামাজিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা চলছে।
দামেস্কভিত্তিক জিহাদি বিশ্লেষক আব্বাস শরিফা বলেন, “এই যোদ্ধারা আদর্শগতভাবে পরিশোধিত এবং নতুন সরকারের প্রতি আনুগত হলেও, তাদের বাদ দিলে তারা আইএস বা আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় দেশগুলো এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে, ওয়াশিংটনের এই নমনীয়তা কৌশলগত, যার লক্ষ্য সিরিয়ার নতুন সরকারকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা এবং চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর পুনরুত্থান ঠেকানো।