গণশুনানিতে পান্থকুঞ্জ জনগণের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা, সংযোগ সড়ক স্থগিতের নির্দেশ

পান্থকুঞ্জ মোকদ্দমা’ শিরোনামের এই প্রতীকী মামলার গণশুনানি হয় শুক্রবার বিকালে ঢাকার পান্থকুঞ্জ উদ্যানে (সার্ক ফোয়ারা গেইট)।
‘পান্থকুঞ্জ মোকদ্দমা’ শিরোনামে আয়োজিত এক প্রতীকী গণশুনানিতে পান্থকুঞ্জ উদ্যানকে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে ঢাকার পান্থকুঞ্জ উদ্যানে (সার্ক ফোয়ারা গেট) এই গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন।
সার্বজনীন অংশগ্রহণ এবং বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত এই প্রতীকী আদালতের শুনানি শুরু হয় বিকেল ৪টায়, যা চলে দুই ঘণ্টাব্যাপী। কৌঁসুলি ও সাক্ষীদের বক্তব্য গ্রহণ শেষে বিচারকমণ্ডলী ‘রায়’ ঘোষণা করেন।
‘বিচারক’ হিসেবে গণশুনানি পরিচালনা করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য গীতি আরা নাসরীন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সামসি আরা জামান, সর্বজনকথার সম্পাদক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
রায়ের মূল নির্দেশনা: পান্থকুঞ্জ উদ্যান জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা,, বাদী পক্ষের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের নির্দেশ, বিবাদী পক্ষ ও অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জনগণের অবাধ প্রবেশাধিকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়কের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা
এই রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত জনগণ করতালির মাধ্যমে তা স্বাগত জানান। সেখানে নাট্যকর্মী, কবি, চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা জানান, এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সংযোগ সড়ক প্রকল্প বাতিল এবং হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ রক্ষায় তাঁরা টানা ১৬৫ দিন ধরে অবস্থান করছেন। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা পার্ক পরিদর্শন করলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
গণশুনানিতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাদী পক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে অভিযোগ পেশ করেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব ও নাঈম উল হাসান।
অভিযোগনামায় উল্লেখিত বিষয়গুলো: অর্থনৈতিক কারসাজি ও পিপিপি নীতিমালা লঙ্ঘন, সংবিধান ও আদালতের নির্দেশ অমান্য, মেয়াদোত্তীর্ণ পরিবেশ ছাড়পত্র ও শর্ত লঙ্ঘন, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প এবং বৈষম্যমূলক চুক্তি, গাছ কেটে পাখি, বাদুড় ও পতঙ্গের আশ্রয় হানি ও প্রজননে ব্যাঘাত
সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য দেন নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, পরিবেশকর্মী সৈয়দা রত্না, পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুদ্দিন তুহিন এবং সংগঠক সৈয়দ মুহাম্মদ জাকির।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ‘উন্নয়ন’ নয়, বরং ‘বিধ্বংসী প্রকল্প’। এতে ঠিকাদারের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে, জনগণের নয়।”
পাভেল পার্থ বলেন, “একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য গড়ে দুইটি গাছ প্রয়োজন। পান্থকুঞ্জে প্রায় ২ হাজার গাছ কাটা হয়েছে, যার অর্থ এক হাজার মানুষের অক্সিজেনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।” তিনি গাছ কাটা সংক্রান্ত বিস্তারিত তালিকা এবং পাখি-পতঙ্গের আশ্রয়হীনতার তথ্যও আদালতে উপস্থাপন করেন।
গণশুনানির আয়োজকদের ভাষ্যে, সংশ্লিষ্ট সরকারি পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা কেউ উপস্থিত হননি। প্রধান বিচারক গীতি আরা নাসরীন একাধিকবার তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন।
আয়োজকদের একজন নাঈমুল হাসান বলেন, “সরকার পক্ষের কেউ আসেননি। এটা প্রমাণ করে তারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নন।”