মসজিদে নববি: মদিনার প্রাণকেন্দ্রে শান্তির পবিত্র আবাস

মদিনার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পবিত্র মসজিদে নববি
ইসলামে তিনটি মসজিদে নামাজ পড়লে বিশেষ ফজিলত অর্জন হয়—মক্কার পবিত্র কাবা শরিফ, ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা, এবং সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববি। এই মসজিদগুলোর মধ্যে মসজিদে নববি মুসলিমদের কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ, কারণ এটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র রওজা শরিফের স্থান এবং ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
নামাজ ও জিয়ারতের ফজিলত
মদিনায় গিয়ে মসজিদে নববিতে সালাত আদায় ও নবীজি (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ সৌভাগ্যের বিষয়। হাদিসে রয়েছে, ঘর থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়লে একটি ওমরাহর সওয়াব অর্জিত হয়।
মসজিদে নববিতে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা নামাজের স্থান রয়েছে। মসজিদের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে কোরআন শরিফ রাখা আছে এবং জমজমের পানি খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে জিয়ারতের জন্য ইহরাম বাধ্যতামূলক নয়, তবে মদিনা থেকে মক্কায় গমনের সময় মিকাত আবিয়ারে আলী অতিক্রমের আগে ইহরাম পরিধান করতে হয়।
রিয়াজুল জান্নাহ: জান্নাতের বাগান
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুজরায়ে মোবারক ও মিম্বার শরিফের মাঝখানের স্থানটি 'রিয়াজুল জান্নাহ' নামে পরিচিত, যার অর্থ 'জান্নাতের বাগান'। এ স্থানটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। মসজিদে নববির নির্মাণকাজের সময় ওসমানি সুলতান আবদুল মাজিদ এখানে খেজুরগাছের খুঁটির স্থানে পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন, যেগুলোর গায়ে রয়েছে নান্দনিক স্বর্ণের কারুকাজ। রিয়াজুল জান্নাহতে প্রবেশের জন্য ‘নুসুক’ অ্যাপে নিবন্ধন করতে হয়।
নারীদের জন্য প্রবেশের সময়সূচি:
-
সকাল ৭টা – সাড়ে ১১টা
-
দুপুর ১টা – ৩টা
-
রাত ৮টা – ১২টা
জান্নাতুল বাকি: সাহাবায়ে কিরামের চিরনিদ্রার স্থান
মসজিদে নববির পাশেই অবস্থিত বিখ্যাত কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’। এখানে হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত ওসমান (রা.)সহ বহু সাহাবি ও ইসলামি ব্যক্তিত্বের কবর রয়েছে। এই কবরস্থান আজও ব্যবহৃত হচ্ছে, প্রতিনিয়ত এখানে কবর দেওয়া হচ্ছে।
ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
-
মসজিদে কুবা:
মদিনায় আগমন করে রাসুল (সা.) প্রথম যে স্থানে নামাজ পড়েন, সেটি কুবা। এখানে গড়ে ওঠে প্রথম মসজিদ। -
মসজিদে কিবলাতাইন:
এই মসজিদে এক নামাজের মধ্যেই কিবলা বদলের ঘটনা ঘটে, অর্থাৎ মুসল্লিরা দুটি কিবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় করেন। -
ওহুদের ময়দান:
ইসলামের দ্বিতীয় যুদ্ধ—ওহুদের যুদ্ধ—এই পাহাড়ঘেরা এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল। দুটি শীর্ষ বিশিষ্ট এই পাহাড় ইসলামী ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। -
খন্দকের পাহাড়:
খন্দকের যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানটিও মদিনার ঐতিহাসিক নিদর্শন।
মসজিদে নববির প্রবেশপথের কাছাকাছি এলাকায় থাকা ট্যাক্সিচালকেরা এসব ঐতিহাসিক স্থান ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করেন। প্যাকেজের খরচ সাধারণত ১০–২০ সৌদি রিয়ালের মধ্যে হয়ে থাকে।