বিএফআইইউ প্রতিবেদন: ২৩% বেড়েছে সন্দেহজনক লেনদেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান গভর্নর।
তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি একাই বিদেশে ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। এই অর্থ মূলত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাচার করা হয়েছে।’ পাচারের এই অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে এবং এই প্রক্রিয়ায় আইনি সংস্কারসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গভর্নর আরও জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ৩ থেকে ৫ বছর সময় লাগতে পারে। ইতিমধ্যে একজনের বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কাউকে হয়রানি করা নয়, বরং পাচারকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আদালতের বাইরে সমাধানে পৌঁছানো।’
বিএফআইইউ-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সংস্থাটির কাছে পাঠানো সন্দেহজনক লেনদেন (STR)-এর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৩৪৫টি, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।
অর্থবছর |
সন্দেহজনক লেনদেন সংখ্যা (STR) |
২০১৯–২০ |
৩,৬৭৫টি |
২০২০–২১ |
৫,২৮০টি |
২০২১–২২ |
৮,৫৭১টি |
২০২২–২৩ |
১৪,১০৬টি |
২০২৩–২৪ |
১৭,৩৪৫টি |
এছাড়া, গত বছর ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয় এবং ১,২২০টি তথ্য বিনিময় করা হয়— যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি।
বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থ পাচার ও হুন্ডি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’ তিনি জানান, এ অবস্থা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও লেনদেন ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে এবং বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডোজ, আইসিএআর, এবং আইএসিসিসি-এর সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে অর্থ পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, কিছু দুর্বল শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করা হতে পারে। তিনি আশ্বস্ত করেন, ‘এক্ষেত্রে যেহেতু সরকার এসব ব্যাংকের মালিকানা গ্রহণ করবে, তাই আমানতকারীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।’
বিএফআইইউ-র পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, পাচার শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের পর বিএফআইইউর কাজ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। প্রতিবেদন পাঠানো আগের চেয়ে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’