সাম্য হত্যাকাণ্ড: আট গ্রেফতার, এখনও পরিষ্কার নয় মোটিভ

বায়ে নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য, ডানে আটক করা আসামিরা, শেষে উদ্ধার করা আলামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা (এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক) শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে, ২৭ মে মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হত্যার মোটিভ বা পেছনের কারণ স্পষ্টভাবে জানাতে পারেননি কর্মকর্তারা।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মামলা তো ডিটেক্ট হয়ে গেছে।” তবে মোটিভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তা স্পষ্ট না করে বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য উপস্থিত ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা।” তিনি জানান, মামলার প্রধান আসামি মেহেদী রিমান্ডে আছেন এবং তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, “ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে সাম্য তার দুই বন্ধুসহ মোটরসাইকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়। সেখানে মেহেদীর গ্রুপের সদস্য রাব্বীর হাতে থাকা একটি ‘ট্রেজার গান’ (ইলেকট্রিক শক দেওয়ার যন্ত্র) দেখে সাম্য সেটি সম্পর্কে জানতে চান। জানতে চাওয়ার এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয় এবং পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এই অবস্থায় ছুরিকাঘাতে সাম্যের মৃত্যু ঘটে।”
ঘটনার পর রাত ১২টার দিকে সাম্যকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডিবির তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন: রাব্বি ওরফে ‘কবুতর’ রাব্বি, মেহেদী হাসান, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন। এদের মধ্যে রাব্বিকে সাম্যকে ছুরিকাঘাতের মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার মেহেদীর দেখানো মতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে।
সাম্যর বড় ভাই সরদার আমিনুল ইসলাম মনে করেন, “ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল।” তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু পুলিশের কর্মকাণ্ডে হতাশ। কী কারণে মারলো, মোটিভটা কী?”
ডিবি জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনটি পৃথক মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপ সক্রিয়। তারা উদ্যানে তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে— তিন নেতার মাজার, মাঝখান ও ছবির হাট এলাকা। মেহেদীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপ এদের মধ্যে একটি এবং গ্রেফতারকৃত আটজন সবাই এই গ্রুপের সদস্য। ডিবি জানিয়েছে, অন্য দুটি গ্রুপ সম্পর্কেও তাদের কাছে তথ্য রয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
তদন্তের স্বার্থে গ্রুপগুলোর নাম প্রকাশ না করলেও সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এনে উদ্যানে ‘মাদকমুক্ত পরিবেশ’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ডিএমপি।
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত বলেন, “বিশ্বব্যাপী মাদক ব্যবসা যেখানে আছে, সেখানে অস্ত্র থাকেই। আপনি আমেরিকার কথা বলেন, কলম্বিয়ার কথা বলেন— সারা পৃথিবীতে মাদকসেবীও আছে, মাদক ব্যবসায়ীও আছে। যেখানে মাদক, সেখানে অস্ত্র আছে।”
ঢাকা শহরে সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি খুন ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, “অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আমরা ডিটেক্ট করি। ফলে অপরাধের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
বাড্ডায় এক খুনের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমাদেরকে দয়া করে সময় দেন। একটা ঘটনা ঘটলেই আমরা বলে ফেলব— এমন কোনো জাদুমন্ত্র আমাদের হাতে নেই।”
তিনি আরও বলেন, “অপরাধ দমনে আমরা সব ধরনের প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা নিই, তবে সব ঘটনা প্রিভেন্টিভ মেজার্স দিয়ে ঠেকানো যায় না।”