যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার আরেক রূপ: হামাস

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে দুই পক্ষের মতানৈক্য, গাজায় সংহতি সংকট অব্যাহত।
গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তা এখনো আলোচনার পর্যায়ে রেখেছে হামাস। তবে সংগঠনটির দাবি, বর্তমান অবস্থায় এই প্রস্তাব গাজায় হত্যাকাণ্ড ও দুর্ভিক্ষ চালিয়ে যাওয়ার পথকেই সুগম করবে।
হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবি পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ইসরায়েল ইতিমধ্যে এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পাঠিয়েছেন পর্যালোচনার জন্য।
রয়টার্সকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বলেন, “এই চুক্তি আমাদের জনগণের ন্যায্য কোনো দাবিই মানে না। যুদ্ধ বন্ধই ছিল আমাদের প্রধান দাবি।” তিনি জানান, হামাস জাতীয় দায়িত্ববোধ থেকেই প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখছে।
প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য নয়: হামাস
হামাসের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি জানান, প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার বা মানবিক সহায়তা প্রবেশের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে এটি বাস্তব সমাধানের কোনো দিকই নির্দেশ করে না।
ইসরায়েল সরকার এখনো প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের কথা জানায়নি। তবে দেশটির সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের স্বজনদের জানিয়েছেন, তিনি উইটকফের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে নেতানিয়াহুর: বিশ্লেষক মত
ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলদার বলেন, “ইসরায়েলের আগ বাড়িয়ে সম্মতি দেওয়া অস্বাভাবিক। নেতানিয়াহু জানেন, এই প্রস্তাব হামাসের জন্য অগ্রহণযোগ্য হবে। এর মধ্য দিয়ে তিনি হামাসকে বিশ্ববাসীর চোখে খলনায়ক বানাতে চান এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে চান।”
তিনি আরও বলেন, “আগেও এমন হয়েছে, যখন নেতানিয়াহু দায় চাপিয়েছেন হামাসের ওপর।”
সমঝোতার সম্ভাবনা ছিল, তবে...
এ সপ্তাহের শুরুতে হামাস দাবি করেছিল, তারা উইটকফের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির সাধারণ রূপরেখায় একমত হয়েছে। সেখানে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা ছিল বলে দাবি করেছিল হামাস।
তারা জানিয়েছিল, যুদ্ধবিরতির পর গাজা পরিচালনায় একটি পেশাদার কমিটি গঠনের বিষয়ও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারে নিশ্চয়তা দেবেন। তবে পরবর্তীতে মার্কিন দূত উইটকফ এসব শর্ত অস্বীকার করেন এবং বলেন, এসব “পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য”।
উপসংহার
গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েই গেছে। ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করতে চায়, আর হামাস চায় ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণ প্রত্যাহার। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব আদৌ সংঘাত নিরসনে কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।