নিশেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অনলাইনে ই-সিগারেটের চটকদার বিজ্ঞাপন ও অবাধ বিক্রি

আমদানিনিষিদ্ধ হলেও অনলাইনে ই-সিগারেটের অবাধ বিক্রি, তরুণদের লক্ষ্য করে চটকদার বিজ্ঞাপন—বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে
ই-সিগারেটকে ধূমপানের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আমদানি নিষিদ্ধ, কিন্তু তাতেও থেমে নেই ই-সিগারেট বা ভেপের চটকদার প্রচার ও বিক্রি। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে এসব পণ্য অনায়াসে বিক্রি হচ্ছে। তরুণদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হচ্ছে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের তথ্য, যা অনেক সময় বিভ্রান্তিকর এবং অবৈজ্ঞানিক।
আজ ৩১ মে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য—‘ঝকমকে পণ্য, মন্দ উদ্দেশ্য’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বজুড়ে ১৩–১৫ বছর বয়সী প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশু তামাক ব্যবহার করছে। কিছু অঞ্চলে কিশোরদের মধ্যে ধূমপানের হার ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
বাংলাদেশেও তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ই-সিগারেটসহ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ENDS)–সম্পর্কিত সব পণ্যকে আমদানিনিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ৩১ ডিসেম্বর এ আদেশ জারি ও ১ জানুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
তবুও বাস্তবে এ নিষেধাজ্ঞার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। দারাজ, বিডি স্টল, আজকের ডিল ডটকম এবং ফুডপান্ডার মতো সাইটে ই-সিগারেট সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।
বিক্রেতাদের বক্তব্য:
দারাজ বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস বলেন, “ই-সিগারেট আমদানিনিষিদ্ধ হলেও বিক্রি নিষিদ্ধ নয়। কেউ যদি আগে আমদানি করে থাকে, তাহলে বিক্রিতে বাধা কোথায়?”
আইন কী বলে?
আইনজীবী ও ধূমপানবিরোধী অধিকারকর্মী সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলছেন, “যে পণ্য আমদানিনিষিদ্ধ, সেটি বিক্রি করাও অপরাধ। বিজ্ঞাপন দেওয়াটাও অপরাধ। যেহেতু ই-সিগারেট শতভাগ আমদানিনির্ভর, তাই এটি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।”
কাস্টমস আইন ২০২৩ অনুসারে, কোনো পণ্য আমদানিনিষিদ্ধ হলে তা আমদানি ও বিক্রি করা আইনগত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তথ্যের ভ্রান্তি ও বিপদ:
দারাজসহ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ই-সিগারেটকে "কম ক্ষতিকর" বলে উপস্থাপন করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) বলছে, ই-সিগারেট কখনোই নিরাপদ নয়।
মানসের সভাপতি ও নেশা নিরোধক চিকিৎসক অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, “ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর—এটা একেবারেই মিথ্যা। এসব প্রচার শুধুই বিক্রির উদ্দেশ্যে। ই-সিগারেটে অন্তত ৭০টি উপাদান রয়েছে যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।”
WHO বলছে, রঙিন ডিজাইন ও বিভিন্ন স্বাদের মাধ্যমে এসব পণ্য তরুণ ও নারীদের আকৃষ্ট করে এবং আসক্তি বাড়ায়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে এই বিষয়ে কার্যকর নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা।